কলকাতা: প্রতিটি শিবরাত্রিতেই মন্দিরে মন্দিরে ঢল নামে ভক্তদের। মহাশিবরাত্রিতে সেই ঢল আরও বড় আকার নেয়। সারা দেশের বিভিন্ন কোণায় ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য শিব মন্দির। যেগুলির মধ্যে অনেকগুলিই জাগ্রত বলে মনে করেন তামাম শিবভক্ত। দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের কথা। 


দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ কী?
ভারতে অসংখ্য শিবমন্দির রয়েছে। তার কোনওটিতে শিব বিগ্রহের রূপে অবস্থান করছেন। কোনওটিতে রয়েছেন লিঙ্গরূপে। এর মধ্যে বেশ কিছু শিবলিঙ্গ স্বয়ম্ভু। হিন্দুধর্মে বিশ্বাস করা হয়, শিব স্বয়ং এই জায়গাগুলিতে প্রকট হয়েছেন। স্বয়ম্ভু শিবলিঙ্গগুলির মধ্যে ১২টি আলাদা করেছেন আচার্য শঙ্করাচার্য। সেগুলি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ নামে বিখ্যাত। দেখে নেওয়া যাক সেগুলি কী কী?


সোমনাথ
গুজরাতে রয়েছে এই মন্দির। এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু ইতিহাস। বারবার বাইরের শক্তির হাতে ধ্বংস হয়েছে এই মন্দির। তারপরেও বারবার তৈরি করা হয়েছে সোমনাথ মন্দির। 


নাগেশ্বর
এই মন্দিরটিও রয়েছে গুজরাতেও। বিশেষজ্ঞরা বলেন শিবপুরাণেও এই মন্দিরটির বিবরণ দেওয়া রয়েছে। শিব তাঁর এক ভক্তকে উদ্ধারের জন্য় নাগরূপে দারুকা নামে এক অসুরকে বধ করেন। তারপর থেকেই নাগেশ্বর নামে পুজো করা হয়।  


ভীমাশঙ্কর
মহারাষ্ট্রে রয়েছে দ্বাদশ জ্য়োতির্লিঙ্গের অন্তগর্ত এই মন্দিরটি। মহারাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নদী কৃষ্ণা। তারই একটি শাখানদী ভীমা। ওই নদীর উৎসে পাহাড়়ের উপর এই মন্দির রয়েছে। মন্দিরের গঠনশৈলীও চোখ জুড়ানো। 


কাশী বিশ্বনাথ মন্দির
বারাণসীতে অবস্থিত এই মন্দির। গঙ্গার পশ্চিমতীরে অবস্থিত শহরে দশাশ্বমেধ ঘাট থেকে হাঁটাপথে রয়েছে এই মন্দির। সারা ভারত তো বটেই, বিদেশ থেকেই মন্দির দেখতে ভিড় জমান ভক্তরা। 


কেদারনাথ
অতি প্রাচীন এই মন্দির রয়েছে হিমালয়ের কোলে। ইতিহাস বলে শঙ্করাচার্যের হাতে এখানে মন্দির তৈরি হয়েছিল। শীতকালে কঠিন আবহাওয়ার কারণে বন্ধ থাকে এই মন্দির। সেই সময় শিব অবস্থান করেন উখিমঠে। 


ত্র্যম্বকেশ্বর
মহারাষ্ট্রেই রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই শিব মন্দিরটি। নাসিকে গোদাবরী নদীর তীরে অবস্থিত। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে একটি পবিত্র কুণ্ড।


গৃষণেশ্বর
মহারাষ্ট্রে অবস্থিত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিবক্ষেত্র গৃষণেশ্বর। এই মন্দিরটিও আক্রমণের শিকার হয়েছিল। পরে রানি অহল্যাবাইয়ের হাতে ফের গড়ে ওঠে মন্দির। কাছেই রয়েছে ইলোরা গুহা।


রামনাথস্বামী
দক্ষিণ ভারতের শেষপ্রান্তে অবস্থিত এই জ্যোতির্লিঙ্গ। রামেশ্বরম দ্বীপে রয়েছে এটি। কথিত রয়েছে, লঙ্কায় যাওয়ার সময় এখানেই বিশ্রাম নিয়েছিলেন শ্রীরাম। সেইসময় দৈববাণী শুনে তিনি শিবলিঙ্গ গড়ে পুজো দেন। তখন শিব প্রকট হয়ে তাঁকে আর্শীবাদ করেন। তারপরে জ্য়োতির্লিঙ্গে পরিণত হন।


মল্লিকার্জুন
অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীশৈলমে রয়েছে এই জ্যোতির্লিঙ্গ। কথিত রয়েছে এখানে কার্তিকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন শিব এবং পার্বতী। 


বৈদ্যনাথধাম
ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে রয়েছে এই জাগ্রত শিবমন্দির। দেশের নানা প্রান্ত থেকে এখানে আসেন শিবভক্তরা। 


মহাকালেশ্বর
মধ্যপ্রদেশে রয়েছে মহাকালেশ্বর মন্দির। রুদ্রসাগর হ্রদের ধারে অবস্থিত এই মন্দির। বছরের সারাসময়েই এখানে ভক্তদের ভিড় লেগে থাকে। 


ওঙ্কারেশ্বর
মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়ায় রয়েছে এই জ্যোতির্লিঙ্গ। এখানে দুটি শিবমন্দির রয়েছে।


ভারতের আরও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিবক্ষেত্র হল কাশ্মীরের অমরনাথ। এখানে গুহার মধ্যে বরফে তৈরি শিবলিঙ্গ রয়েছে। বছরের নির্দিষ্ট একটি সময় এই রাস্তা খোলে। দর্শন করতে জড়ো হল অসংখ্য শিবভক্ত।


জ্যোতির্লিঙ্গ কতগুলি? কোন কোনটি জ্যোতির্লিঙ্গ তা নিয়ে বিস্তর তর্কবিতর্ক রয়েছে। তা বাদ দিয়েও বলা যায় শিবের উপাসনার জন্য যে কোনও মন্দিরেই ঢল নামে ভক্তদের।


আরও পড়ুন: মহাদেবের আশীর্বাদ পেতে শিবরাত্রির দিন কী করবেন আর কী করবেন না?