কলকাতা: হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথি মোহিনী একাদশী নামে পরিচিত। কথিত আছে, যে ব্যক্তি মোহিনী একাদশীর ব্রত পালন করেন, তিনি মোহমায়ার জট থেকে মুক্ত হয়ে মোক্ষ লাভ করে এবং তার সকল পাপ নাশ হয়। 


এবছর কোন সময়ে পড়েছে এই পুজো? 


চলতি বছরের মে মাসের প্রথম দিনেই পড়েছে মোহিনী একাদশী। একাদশী তিথি শুরু ৩০ এপ্রিল রাত ৮টা ২৮ মিনিটে এবং পয়লা মে রাত ১০টা ০৯ মিনিটে শেষ হবে। উদয় তিথি অনুসারে একাদশী উদযাপিত হবে পয়লা তারিখ। পঞ্জিকা মতে, একাদশী তিথির দিন দু'টি শুভ যোগ তৈরি হচ্ছে - রবি যোগ সকাল ৫টা ৪১ থেকে সন্ধ্যা ৫টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। আর, ব্রহ্ম মুহূর্ত থেকে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত থাকবে ধ্রুব যোগ।


পুরাণ অনুসারে, মোহিনী একাদশীতে মোহিনী রূপ অর্থাত্‍ নারী রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন ভগবান শ্রীবিষ্ণু। বিষ্ণুর অসংখ্য রূপের মধ্যে এই মোহিনী রূপই একমাত্র নারী রূপ। এই তিথিতে শ্রীবিষ্ণুর নারী-রূপের আরাধনা করা হয়। মনে করা হয়, মোহিনী একাদশীতে বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর পুজো করলে অর্থ লাভ হয়। আবার মনে করা হয়, মোহিনী রূপ নিয়েই নাকি ভষ্মাসুরের থেকে মহাদেবকে রক্ষা করেছিলেন বিষ্ণু।


পুরাণ অনুসারে, সুমুদ্র মন্থনের পর অমৃতের ভাণ্ড উঠে আসতেই, অসুররা তা কেড়ে নিয়েছিল। এতে দেবতারা ভয় পেয়ে যান। এমতাবস্থায় দেবতারা নারায়ণের শরণাপন্ন হন, তখন বিষ্ণু এক অপরূপ সুন্দরী নারীর রূপ ধারণ করেন। বিষ্ণুর সেই মনোমোহিনী রূপে অসুররা মোহিত হয়ে পড়ে। সেই সুযোগে রূপে দ্বারা অসুরদের ভুলিয়ে তাদের থেকে অমৃত নেন বিষ্ণু। মোহিনী অবতার সত্ত্বেও বিষ্ণুকে চিনতে পেরে যান দুই অসুর, রাহু ও কেতু। অমৃত পান করার অভিলাসে, তারা দেবতার ছদ্মবেশে দেবতাদের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তাদের চিনে ফেলে সূর্য ও চন্দ্র এবং বিষ্ণুকে তা জানান। বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে রাহু ও কেতুর মাথা শরীর থেকে কেটে আলাদা করে দেন। 


অন্যদিকে, কুর্মপুরাণে বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের ‘মোহিনী’ একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করলেন যে, -“হে জনার্দন!বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষীয়া একাদশীর কী নাম, কী ফল ও কী বিধি তা আপনি কৃপা করে আমাকে বলুন।” তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ধর্ম পুত্রকে বললেন ,“হে ধর্মপুত্র, আপনি যে প্রশ্ন আমায় করলেন ক্রেতা যুগে ভগবান শ্রী রামচন্দ্র মহামুনি বশিষ্টের কাছে এই একই প্রশ্ন রেখেছিলেন। তিনি মহামুনিকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, হে মুনি শ্রেষ্ঠ আমি জনক নন্দনী সীতার বিরহে বহু দুঃখ ভোগ করছি, তাই একটি উত্তম ব্রতের কথা আমাকে বলুন। যার দ্বারা সকল পাপ ক্ষয় হয় ও সকল দুঃখ বিনষ্ট হয়।- তখন রামচন্দ্রের মুখে তার বিরহ জনিত কষ্টের কথা শুনে মহামুনি বশিষ্ঠ মোহিনী একাদশীর কথা বলে বলেন যে, “হে রামচন্দ্র,তুমি উত্তম প্রশ্ন করেছো, যদিও তোমার নামগ্রহণেই মানুষ পবিত্র হয়ে ওঠে। তবুও লোকের মঙ্গলের জন্য তোমার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ও পরম পবিত্র একটি ব্রতের কথা বলছি।বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথি ‘মোহিনী’ নামে প্রসিদ্ধা। এই ব্রত পালন করলে মানুষের সকল দুঃখ দূর হয় ও সকল পাপ নষ্ট হয়।


আরও পড়ুন, যত বেতন তার চেয়ে বেশি কাজ? আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে জেনে নিন আদৌ এই নিয়ম রয়েছে কি না!