কলকাতা : দেশজুড়ে চলছে নবরাত্রি ( Navratri )  উৎসব। প্রতিপদ থেকে নবমী - দেবীকে ৯ টি রূপে আরাধনা করা হয়। এর মধ্যে দেবীর সপ্তম 9 Saptami )  রূপ কালরাত্রি  ( Kal Ratri ) । নবরাত্রির সপ্তম রাতে দেবী পূজিত হন কালরাত্রি নামে। ঋগ্বেদের রাত্রিসুক্তে পরমাত্মাই রাত্রিদেবী। এই অবতারে মা দুর্গার রূপ ভয়ঙ্করী। মহাপ্রলয় কালে এই রাত্রিরূপিণী মাতার কোলেই শেষ হয় বিশ্বের।


এই কালরাত্রির চেহারা কেমন ?  অনন্ত মহাকাশে নৃত্যরত কালভৈরবের দেহ থেকেই আবির্ভূতা এই দেবী । ইনি দেবী যোগনিদ্রা মহাকালিকা বা কালরাত্রি নামে খ্যাত। এখানে দেবী কৃষ্ণবর্ণা। রং তাঁর অন্ধকারের মতো কালো, এলোকাশি চুলে মা এই রূপে নির্ভয়া। 


আলুলায়িত কেশে তিনি ধাবিত শত্রুর দিকে। তাঁর কণ্ঠে বিদ্যুতের মালিকা। ত্রিনয়নী দেবীর শ্বাস প্রশ্বাসে বেরিয়ে আসে আগুনের হলকা। ভীষণদর্শনা দেবীর তিন হাতে অস্ত্র। এক হাতে ভক্তদের প্রতি বরাভয়। এই রূপই উপাসিত হয় কালিকা রূপে।


স্বামী যুক্তানন্দের লেখা 'গল্পে শ্রী শ্রীচণ্ডী'তে কালরাত্রি সম্পর্কে উল্লেখ আছে,


'একবেণী জপাকর্ণপুরা নগ্না খরাস্থিতা।


লম্বোষ্ঠী কার্ণিকাকণী তৈলাভ্যক্তশরীরিণী।।


বামপাদোল্লসল্লোহলতাকণ্টকভূষণা।


বর্ধনমূর্ধধ্বজা কৃষ্ণা কালরাত্রির্ভয়ঙ্করী।। 


অর্থাৎ কিনা দেবীর গায়ের রং অন্ধকারের মত কালো। মাথার চুলগুলি ঘন মেঘের মতো, এলোমেলো । গলায় বিদ্যুৎ ঝলকের মতো ঝকঝক করছে মালা। মা এখানে ত্রিনয়নী। বিশালাকৃতি চোখ ব্রহ্মাণ্ডের মতো গোল গোল।গভীর সেই চোখ গুলি থেকে  থেকে বিদ্যুতের মত দ্যুতি বিচ্ছুরিন হয়। মায়ের শ্বাস -প্রশ্বাসের সঙ্গে ভয়ঙ্কর আগুনের শিখা বের হয়।

 'গল্পে শ্রী শ্রীচণ্ডী'তে কালরাত্রি সম্পর্কে উল্লেখ আছে, কালরাত্রির বাহন গাধা।  তাঁর ডানহাতে বরমুদ্রা, ডানদিকের নিচের হাতে অভয় মুদ্রা। এবং বামদিকের উপরের হাতে লোহার কাঁটা ও বামদিকের নিচের হাতে খড়গ ধরে রয়েছেন । 


দেবী কালরাত্রির রূপ যদিও ভয়ানক, তবুও ইনি সবসময় শুভ ফলই প্রদান করেন। সেজন্য দেবীর আর একনাম "শুভঙ্করী" তিনি দুষ্টের বিনাশকারিণী এবং শিষ্টের পালনকর্ত্রী।


ত্রিনয়নী কালরাত্রি মা ভক্তদের শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করেন। তবে এই রূপেও দেবী ভক্তের শুভ করেন। তাই অন্যদিকে তিনি শুভঙ্করী। দেবীর বাহন গাধা। মা কালরাত্রি অল্প বয়সে কোনও ফাঁড়া থাকলে তা নাশ করেন। 


নবরাত্রিতে দেবীর যে ৯ টি রূপের পুজো হয়, তা হল - প্রথম শৈলপুত্রী, দ্বিতীয় ব্রহ্মচারিণী, তৃতীয় চন্দ্ৰঘণ্টা, চতুর্থ কুষ্মাণ্ডা, পঞ্চম স্কন্দমাতা, ষষ্ঠ কাত্যায়নী, সপ্তম কালরাত্রি, অষ্টম মহাগৌরী এবং নবম সিদ্ধিদাত্রী—এঁরা নবদুর্গা নামে অভিহিতা ।  এঁদেরকেই নবদুর্গা বলা হয়শ্রীশ্রীচণ্ডীতে।