বর্ধমান : অমাবস্যার দিন যদি তাঁকে চাঁদ দেখাতে পারেন তবেই তিনি তাঁকে সাধক বলে মানবেন। সাধক কমলাকান্তকে (Kamalakanta) নাকি এমনই পরীক্ষার মুখে ফেলে দিয়েছিলেন তৎকালীন বর্ধমানের রাজা তেজচাঁদ। কথিত আছে, ঘোর অমানিশায় বর্ধমানের আকাশে মহারাজকে পূর্ণিমার চাঁদ দেখিয়েছিলেন এই সাধক ! তার পর থেকেই কমলাকান্তকে অন্য চোখে দেখতে শুরু করেন তেজচাঁদ। গুরু হিসাবে মেনে নেন তাঁকে। 


রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাধিক কাহিনি-সমৃদ্ধ কালীক্ষেত্রের অন্যতম বর্ধমানের বোরহাটের কমলাকান্ত কালীবাড়ি। এখান থেকেই সাধনা শুরু করেছিলেন কমলাকান্ত। আর এই মন্দিরেই সিদ্ধিলাভ করেছিলেন । তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব বর্ধমানের কালনায় জন্মছিলেন কমলাকান্ত। অল্পবয়সেই তাঁর বাবা মারা যান। তাই, গলসির চান্না গ্রামে মামারবাড়িতে থাকতে শুরু করেন তিনি। সেখানে টোলে পড়াশোনা করতেন। পাশাপাশি শুরু করেন সাধনাও।


কথিত আছে, মহারাজ তেজচন্দ্র তাঁর ছেলে প্রতাপচন্দ্রকে শিক্ষা দীক্ষায় উপযুক্ত করে তোলার জন্য কমলাকান্তকে বর্ধমানে নিয়ে এসেছিলেন। এরপর সংলগ্ন লাকুড্ডি এলাকায় তাঁরা থাকার জন্য একটি বাড়ি তৈরি করে দেন। পাশাপাশি মহারাজ কমলাকান্তের সাধন ভজনের জন্য একটি মন্দির করে দেন। সেখানেই কমলাকান্ত কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১২১৬ বঙ্গাব্দে কমলাকান্ত এখানে মায়ের পুজোর প্রচলন করেছিলেন। প্রতি বছর প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়ে থাকে মায়ের মন্দিরে। দূরদূরান্ত থেকে আসেন ভক্তরা।


প্রত্যেক অমাবস্যায় বৈদিক মতে পুজো হলেও, কার্তিক মাসের অমাবস্যায় তন্ত্র মতে পুজো হয় এখানে। কালীপুজোর দিন রাতভর দেবীর আরাধনা হয়। পরদিন অন্নকূট। তৃতীয় দিনে মন্দির প্রাঙ্গনে সাধক কমলাকান্ত দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে। কথিত আছে, সাধক কমলাকান্ত কালী মাকে মাগুর মাছের ভোগ খাওয়াতেন। সেই রীতি মেনে আজও মাকে কালীপুজোয় মাগুর মাছের ভোগ দেওয়া হয়ে থাকে। শোনা যায় যে, কালীমূর্তিতে প্রাণ রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন কমলাকান্ত। এর প্রমাণ চান রাজা। সেই সময় প্রতিমার পায়ে বেল কাঁটা ফুটিয়ে দেন কমলাকান্ত। এরপরের ঘটনায় কার্যত বিস্মিত হয়ে যান রাজা। তিনি লক্ষ্য করেন, ক্ষতস্থান থেকে ঝরে পড়ছে রক্ত।


এই পুজোয় আগে ছাগ বলি হত। বর্তমানে অবশ্য তা হয় না। এই মন্দিরে পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন কমলাকান্ত। তাঁর ইচ্ছা ছিল, মৃত্যুর পর মায়ের চরণতলে তাঁকে ঠাঁই দেওয়া হয় যেন। সেই ইচ্ছানুসারে, তাঁর সমাধির উপরই প্রতিষ্ঠা করা হয় মায়ের মূর্তি ও মন্দির। কমলাকান্তের কালী ধাতুর তৈরি।