পুরী : কথায় বলে ভোগ দর্শনে দুর্ভোগ কাটে। পুরীর জগন্নাথ ধামের প্রসাদ জগৎ বিখ্যাত। সারা বিশ্ব থেকে এই প্রসাদ লাভের আশায় ছুটে আসে ভক্তকূল। জগন্নাথ দেবের ভোগ পাওয়া নাকি পরম সৌভাগ্যের। এই প্রসাদ খেয়ে পেট ভরে না, এমন মানুষ নকি পাওয়া যায় না। আর কয়েকদিন পরই রথ যাত্রা। তার আগে পুরী সেজে উঠছে উৎসব নগরীর সাজে।  রথের রশি ছুঁলে নাকি বহু পাপ ধুয়ে মুছে যায়, এমনটা বিশ্বাস অনেকেরই। 


ভগবান বিষ্ণু ভারতে চার ধামে অবস্থান করেন। ভক্তের বিশ্বাস, তিনি প্রথমে বদ্রীনাথে থিতু হন। তারপর সেখানে স্নান করেন। গুজরাতের দ্বারকায়  পোশাক পরিবর্তন করেন। দ্বারকার পরে, তিনি আসেন ওড়িশার পুরীতে। সেখানে অন্নগ্রহণ করেন।  অবশেষে তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে বিশ্রাম নেন । কিংবদন্তি বলে, জগন্নাথদেব  খিচুড়ি খেতে বড় ভালবাসেন। এর পেছনে একটি গল্পও প্রচলিত আছে।  


ওড়িশার মানুষ জগন্নাথকে পুত্রের মতো ভালোবাসেন। সেখানকারই এক মহিলা ছিলেন কর্মা বাই। তিনি ভগবান জগন্নাথের প্রবল ভক্ত ছিলেন।  তিনি  ঈশ্বরকে ভালবাসতেন নিজের ছেলের মতো করে।  তাই তিনি কখনও জগন্নাথকে খাবার দিতে ভুলতেন না। একদিন তিনি ভাবলেন, ফল ও মিষ্টির বদলে নিজের হাতে বানানো খিচুড়ি জগন্নাথকে নিবেদন করা উচিত। কিন্তু মনে মনে সংশয় ছিল তাঁর পছন্দ হবে কি না।


জগন্নাথ কর্মা বাইয়ের এই ইচ্ছা বুঝতে পারলেন। নিজেই তার সামনে উপস্থিত হলেন। বললেন তিনি ক্ষুধার্ত। কর্মা বাই দ্রুত খিচুড়ি তৈরি করে দিলেন। জগন্নাথদেব তো খুব আনন্দ করে খেলেন সেই ভোগ। এতটাই তৃপ্ত হলেন যে, কর্মা বাইকে বললেন, তাঁর খুবই ভাল লেগেছে খিচুড়ি। এবার থেকে তিনিপ্রতিদিন খিচুড়ি খেতে আসবেন। একদিন এক পূজারী কর্মাবাইয়কে বললেন, স্নান না করে পুজো করা বা ভাগবানকে ভোগ দেওয়া উচিত নয়। পরের দিন, কর্মাবাই স্নান করে খিচুড়ি তৈরি করতে গিয়ে দেরি করে ফেললেন। এদিকে জগন্নাথ তো হাজির।  বললেন, মা তাড়াতাড়ি করো, মন্দিরের দরজা খুলে যাবে। জগন্নাথদেব সেদিন এত দ্রুত খিচুড়ি খেলেন যে , খেতে গিয়ে চোখে জল এসে গেল। মুখ প্রায় কাঁদোকাঁদো, চোখে জল। 


মন্দিরের দরজা খুলতেই পুরোহিত দেখলেন যে, ভগবান জগন্নাথের সারা মুখে খিচুড়ি লেগে আছে। আর  চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে। পুরোহিত জিজ্ঞেস করলে, ভগবান তাঁকে ব্যাপারটা খুলে বললেন।  তখন পুরোহিত বললেন, প্রতিদিন মন্দিরে খিচুড়ি রান্না হবে তাঁর জন্য। পুরোহিত নিজেই তাঁকে প্রতিদিন খিচড়ি খাওয়াতেন। সেই থেকে ভগবান জগন্নাথকে খিচুড়ি দেওয়ার প্রথা নীলাচলে। 


সূত্র : এবিপি লাইভ