কলকাতা: সরস্ ও বতী – এই দুই সংস্কৃত শব্দের সন্ধিতে সরস্বতী। তিনি বিদ্যার দেবী। সরস্ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হ্রদ বা সরোবর হলেও এটির অপর অর্থ "বাক্য"; বতী শব্দের অর্থ "যিনি অধিষ্ঠাত্রী"। অর্থাৎ "যে দেবী বাক্যের অধিকারিণী"। শ্বেতশুভ্র বসন পরিহিতা দেবী পুজোয় আছে নানা উপাচার, নানা বিধি। রয়েছে একাধিক বিশ্বাসও। তেমনই একটি বিশ্বাস- কুল খাওয়া নিয়ে। অনেকেই বলে সরস্বতী পুজোর আগে কুল খাওয়া মানা। খেলেই পরীক্ষায় ফেল অবশ্যম্ভাবী। তবে অনেকেই আবার এই বিশ্বাসকে বিধি পর্যায়ে মান্যতা দেন না। সত্যি কি সরস্বতী পুজোর আগে বা পরে কুল খাওয়া নিয়ে কোনও নিয়ম নিষেধাজ্ঞা আছে? 


সনাতন ধর্মীয় 'বিধান' না হলেও এটিকে লোকাচার বলাই যায়। সেই লোকাচার অনুযায়ী, বঙ্গদেশে পূজিত দেবতাকে কোনও নতুন ফসল নিবেদনের রীতি ছিলই। অনেকেরই ধারণা সেই নীতি থেকেই মনে করা হয় সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই। 


শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ‘বার্তাকু কার্তিকে বর্জ্যং মূলং বা বদরং মাঘে। চৈত্রে শিম্বী পুনস্তুম্বী ভাদ্রে বর্জ্যং দ্বিজাতিভিঃ’। অর্থাৎকার্তিকে বেগুন, মাঘে মুলো বা কুল, চৈত্রে শিম এবং ভাদ্রে গোলাকার লাউ খাওয়া উচিত নয়। 


তবে কুল খাওয়া নিয়ে ব্যাসদেব প্রসঙ্গও জানা যায় নানা সূত্র থেকে। সরস্বতী দেবীকে তুষ্ট করার জন্য মহামুনি ব্যাসদেব বদ্রিকাশ্রমে তপস্যা করেছিলেন। সেই সময় তাঁকে একটি কুল বীজ রেখে দেবী শর্ত দেন এই কুলবীজ অঙ্কুরিত হয়ে বড় গাছে নতুন কুল হলে সেই কুল তাঁর মাথায় পড়লে তাঁর তপস্যা পূর্ণ হবে। 


সেই শর্ত মেনেই তপস্যা শুরু করেন ব্যাসদেব। সেই কুল বীজ থেকে বড় গাছ হয়ে, সেই গাছের কুল যেদিন ব্যাসদেবের মাথায় পড়ে, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে দেবী সরস্বতী তাঁর প্রতি তুষ্ট হয়েছেন। সেই দিনটি ছিল পঞ্চমী। সেই দিন সরস্বতীকে কুল নিবেদন করে ব্যাসদেব ব্রহ্মসূত্র রচনা আরম্ভ করেছিলেন।


লোকাচার অনুযায়ী এই নিয়ম মেনেই দেবী সরস্বতীকে আগে কুল নিবেদন করে তারপর তা খাওয়া হয়ে থাকে। তবে কুল খাওয়ার সঙ্গে অবশ্য পরীক্ষায় পাশ-ফেলের কোনও সম্পর্ক নেই। 


কী বলে বিজ্ঞান? 


এ প্রসঙ্গে সামারিটান মেডিকাল সার্জিকাল অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার, IGNOU অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলর ড. অরিত্র খাঁ বলেন, 'কাঁচা কুলে খুব কষ থাকে। যা খাওয়া শরীরের জন্য ভাল নয়। এনজাইমেটিক অ্যাক্টিভিটির পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু যদি পাকা কুল খাওয়া হয় সেক্ষেত্রে কিন্তু উপকার পাওয়া যায়। ডায়েটরি ফাইবার সমৃদ্ধ এই ফল। তবে এর সঙ্গে পরোক্ষভাবে সরস্বতী পুজোর আগে কুল খাওয়া না খাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। এটা বিশ্বাস এবং একান্তই লোকাচার। যদিও কুল এমন সময়ই পাকে যে সময়ে সরস্বতী পুজোও থাকে। হয়তো সেই ভাবনা থেকেই এই বিশ্বাস চলে এসেছে।' 


আরও পড়ুন, ৩০ বছর পর বিরল কাকতালীয় যোগ, কোন জাতকদের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স খালি হবে মুহূর্তেই!