কলকাতা : সতীর একান্ন পীঠের মধ্যে কয়েকটি রয়েছে বাংলাদেশে। যার মধ্যে অন্যতম মা যশোরেশ্বরী ( Jashoreshwari peetha in Bangladesh) । কথিত আছে, সুদর্শন চক্রে খণ্ডিত হয়ে সতীর করকমল বা তালুদ্বয় পড়েছিল এখানে।  অনেকে বলেন, দেবীর দু’টি পা পড়েছিল। সতীর দেহের কোনও অংশ এখানে পড়েছিল, তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও বাংলাদেশের অন্যতম এই যশোরেশ্বরী মন্দির। 


মায়ের পানিপদ্ম পড়েছিল এখানে


বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার ঈশ্বরীপুরে মা যশোরেশ্বরীর মন্দির। এখানে পীঠ-ভৈরবের নাম চণ্ড। তন্ত্রচূড়ামণিতে বলা হয়েছে, ‘যশোরে পানিপদ্ম দেবতা যশোরেশ্বরী চণ্ডশ্চ ভৈরব যত্র তত্র সিদ্ধ ন সংশয়।’ মানুষের বিশ্বাস, এই সতীপীঠে কায়মনোবাক্যে পুজো করলে ভক্তের মনোবাসনা পূর্ণ হয়।  

কেমন এখানে মায়ের রূপ ?
এখানে মায়ের মুখটুকুই শুধু চোখে পড়ে।শ্রীযশোরেশ্বরীর বাকিটুকু কাপড়ে আবৃত। হাত বা পা শ্রীচরণ কিছুই নজরে পড়ে না।  মায়ের মাথার ওপর টুকটুকে লাল রঙের চাঁদোয়া। মায়ের প্রিয় রক্তজবার মালা । তাই মাকে সকলে লাল জবাব মালা দিয়ে পুজো দেন। নানা অলংকারে ভূষিতা মা। মাথায় সোনার মুকুট নজর কাড়ে। অনেকেই বলেন, মালদার জাগ্রত জহুরা মায়ের সঙ্গেদেবীর সাদৃশ্য রয়েছে।  


সম্প্রীতির উদাহরণ যশোরেশ্বরী মন্দির 

মন্দিরের নির্মাণ নিয়েও রয়েছে একাধিক মত।  কথিত আছে, অনরি নামে এক ব্রাহ্মণ প্রথম মন্দিরটি তৈরি করেন। কিন্তু সময়কাল জানা যায়নি।  শোনা যায়, তার বহুকাল পর দেনুকর্ণ নামে এক ক্ষত্রীয় মন্দিরটি সংস্কার করান। তবে মূল মন্দিরটি নতুন রূপ পায় রাজা প্রতাপাদিত্যের হাতে। কথিত আছে, গৌড় থেকে এসে এই অঞ্চলেই ইছামতী ও যমুনার সঙ্গমস্থলে রাজধানী স্থাপন করতে চান রাজা প্রতাপাদিত্য। রাজধানী নির্মাণের জন্য বন জঙ্গল সাফ করাচ্ছিলেন রাজা। এমন সময় এক অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হন কামালউদ্দিন নামে তাঁর এক কর্মচারী। কামালউদ্দিন দেখেন, ঝোপের আড়ালে জ্যোতির্ময় আলোক ছটা। সেখান থেকে বের হচ্ছে ধোঁয়া। ঘটনার কথা রাজাকে জানান তিনি। জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে রাজা দেখেন, এক পরিত্যক্ত মন্দির ও এক প্রস্তরখণ্ড। পাথরের খণ্ডটি অনেকটা হাতের তালুর মতো দেখতে। পাশেই পড়ে রয়েছে টাটকা জবা ফুল। তখনই সেই স্থানে দেবমাহাত্ম্য অনুভব করেন তিনি। তাঁরই উদ্যোগে নতুন করে তৈরি হয় মন্দির। জায়গার নাম রাখেন যশোরেশ্বরী পুরী। আর সেই নাম থেকেই দেবীর নাম যশোরেশ্বরী। 


শুধু মন্দির নির্মাণ নয়। তৎকালীন সমাজে সৌহার্দ্যের বার্তাও দেন রাজা প্রতাপাদিত্য। মন্দিরের অদূরে নির্মাণ করান একটি মসজিদ ও একটি গীর্জা। মসজিদটির নাম টেঙ্গা মসজিদ। টেঙ্গা শব্দের অর্থ যুদ্ধ শিবির। মসজিদটি উৎসর্গ করেন তাঁর কর্মচারী কামালউদ্দিনের উদ্দেশে, যিনি প্রথম দেবীস্থানে অলৌকিক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। মসজিদ থেকে কিছুটা দূরেই একটি গীর্জা তৈরি করান তিনি। নাম, ঈশ্বরীপুর চার্চ। 


যশোরেশ্বরী মন্দিরের সঙ্গে ত্রিকোণের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। মন্দিরের অনেক কিছুই ত্রিকোণাকৃতি। যেমন, ভৈরবের মন্দির ত্রিকোণ। ভৈরবের বেদীটিও ত্রিকোণাকৃতি। দেবীর সমস্ত কাজ যে পুকুরের জলে হয়, সেই পুকুরও ত্রিকোণাকৃতির। পুজো হয়ে যাওয়া ফুল যেখানে ফেলা হয়, সেই জায়গাটিও ত্রিকোণ। রাজা প্রতাপাদিত্যের পতাকা ও মুদ্রাও ছিল ত্রিকোণাকৃতি। 


এক সময়ে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল যশোরেশ্বরী মন্দির। ইঁটের স্তম্ভ আর দেওয়ালের গায়ে জন্ম নিয়েছিল বড় বড় গাছ। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে হয়েছে মন্দিরের সংস্কার। এখানে পুজো দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।  


আরও পড়ুন :
 বিশ্বাস, কঙ্কালীতলায় কুণ্ডের ঈশাণ কোণে দেবী সতীর কাঁখাল নিমজ্জিত !