মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান:  খনি অঞ্চলে এখনও সমহিমায় পুজিত হন খাদান কালী। জঙ্গলের মাঝে চার দিক পাঁচিল দিয়ে ঘেরা কিন্তু ছাদ খোলা এটাই মাহাত্ম্য খাদান কালীর। ৬০ এর দশকের ঘটনা জঙ্গলের মাঝে গাছের তলায় রাখা থাকতো মা কালীর পটচিত্র, খনি অঞ্চল অন্ডালের বক্তারনগর এলাকায়, অন্ডাল রানীগঞ্জ জামুরিয়া পাণ্ডবেশ্বর এই এলাকা কয়লা খনি অধ্যুষিত।


১৯৬০ সালে পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডালে শুরু হয় এই পুজো। কথিত আছে, চারদিকে কয়লাখানি দিয়ে ঘেরা, মাঝ জঙ্গলে গাছের তলায় রাখা ছিল মা কালীর পটচিত্র । হঠাৎ একদিন সেই রাস্তার ধার দিয়ে যেতে গিয়ে গর্তে পড়ে যায় কয়লা ভর্তি গাড়ি । দিনভর চেষ্টা করেও গাড়ির চাকা গর্ত থেকে তোলা যায়নি। কয়লা খনির ম্য়ানেজারের অনুরোধে গাছের তলায় থাকা সেই পটচিত্র পুজো করতে শুরু করেন চালক এবং সহ চালকরা। স্থানীয়দের বিশ্বাস, তারপরই গাড়ির চাকা তোলা সম্ভব হয়। ছড়িয়ে পড়ে মায়ের মাহাত্ম্য়। চারিপাশে কয়লা খাদান থাকায়, নাম হয়- খাদান কালি। 


 ছাদ খোলা কোনও আচ্ছাদন নেই, শুধু চারদিকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। এটাই হচ্ছে এই মন্দিরের বিশেষত্ব, প্রতিবছর কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে প্রচুর লোকসমাগম হয় খাদান কালীর পুজোয়, মন্দিরের পাশেই রয়েছে প্রকাণ্ড জলাশয়। যা একসময় কয়লা খাদান ছিল। সেই জলাশয়ের জল দিয়েই পুজোর কাজকর্ম হয়। গত প্রায় ৬৫ বছর ধরে, জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে তো বটেই ভিন জেলা থেকে এমনকি প্রতিবেশী ও পার্শ্ববর্তী জেলা ঝাড়খণ্ড  থেকেও লোকজন আসে এই খাদান কালীর পুজোয়।


পুজোর পরে ভোগ বিতরণ হয় এবং অষ্টমঙ্গলাতেও প্রচুর  মানুষজনের সমাগম হয়। এবং সেদিনও ভোগ বিতরণ হয়, মন্দিরের সেবাইত অভিজিৎ চক্রবর্তী ও মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা অমিত ঘোষ সকলেই জানালেন খাদান কালীর এই মাহাত্ম্যর কথা। প্রধান সেবায়েত অমিত ঘোষ থেকে অন্ডাল এর স্থানীয় বাসিন্দা মানিক চক্রবর্তী সকলেই জানালেন, খাদান কালীর মাহাত্ম্যর কথা, ভক্তি ভরে পুজো আর্চা করলে মা মনস্কামনা পূরণ করেন।


আরও পড়ুন, ত্রাণ নিয়েও 'টানাটানি' ! খেজুরিতে BJP বিধায়ককে ঘিরে তৃণমূলের বিক্ষোভ


অপরদিকে, বালুরঘাটের রঘুনাথপুরের জাগ্রত তারা কালী। এক সময়ের বালুরঘাটের  বোলদাবাড়ি আজ রঘুনাথপুর নামে পরিচিত। সে সময় এই অঞ্চল জঙ্গলে পূর্ণ ছিল। সেই জঙ্গলেই তারা কালীর পুজো শুরু হয়। ইতিহাস গবেষক ও শিক্ষক ডঃ সমিত ঘোষ জানিয়েছেন জনশ্রুতি আছে যে, ডাকাতরা এই পুজো শুরু করে। এখন এই ডাকাতরা কি শুধুই ডাকাত ? না কি বিপ্লবী ? স্বদেশী, না কি স্বাধীনতা সংগ্রামী এ নিয়ে নিশ্চিত কিছু জানা যায় না। বৃটিশ আমলে অনেকে বিপ্লবীদেরকে ডাকাত মনে করত। যাই হোক ডাকাতরা ডাকাতি করতে যাবার আগে দেবীর কাছে পুজো দিত। ধীরে ধীরে রঘুনাথপুরে গঞ্জ গড়ে ওঠায় মানুষের বসবাস বাড়তে থাকে।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।