নয়াদিল্লি: চিরকালীন না হলেও, আগামী কয়েক দশকের সঙ্গ। পৃথিবীর ‘দ্বিতীয় উপগ্রহ’ হিসেবে এক মহাজাগতিক বস্তুকে নিজের দলে পেল চাঁদ। মাত্র কয়েক দিন বা কয়েক বছর নয়, আগামী ছ’দশক পৃথিবীর উপগ্রহ রূপেই সৌরজগতে বিরাজ করবে সেটি। (Second Moon of Earth)
পৃথিবীর ‘দ্বিতীয় উপগ্রহ’ হয়ে উঠল যে মহাজাগতিক বস্তু, তার নাম 2025 PN7. ‘দ্বিতীয় উপগ্রহ’ বলা হলেও, আসলে এটি Quasi Moon, অর্থাৎ আধা চাঁদ। ২০৮৩ সাল পর্যন্ত সেটি পৃথিবী ও চাঁদকে সঙ্গ দেবে। এই মুহূর্তে পৃথিবীর পাশে, প্রায় সমান গতিতেই ছুটে চলেছে 2025 PN7. অর্থাৎ সেটিও ৩৬৫ দিনের কাছাকাছি সময়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। (2025 PN7 Quasi Moon)
এই 2025 PN7 আসলে একটি গ্রহাণু। সেটি 'অর্জুন গ্রহাণু' গোত্রের, অর্থাৎ যে সমস্ত গ্রহাণু আমাদের সৌরজগতের অন্তর্ভুক্ত।এদের কক্ষপথ পৃথিবীর মতোই। মহাভারতের কেন্দ্রীয় চরিত্র অর্জুনের নামেই এমন নামকরণ।
পৃথিবীর মতো 2025 PN7-ও সূর্যকেই প্রদক্ষিণ করে চলেছে। পৃথিবীর সঙ্গে প্রায় সমান্তরাল অবস্থানে থেকে সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। চাঁদ যেমন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা আবদ্ধ, 2025 PN7-র উপর পৃথিবীর কোনও প্রভাব নেই।
ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াইয়ের বিজ্ঞানীরা 2025 PN7-র আবিষ্কর্তা। চলতি বছরের গ্রীষ্মেই সেটি প্রথম চোখে পড়ে বিজ্ঞানীদের। 2025 PN7-এর আয়তন ১৮-৩৬ মিটার, অর্থাৎ একটি ছোট বিল্ডিংয়ের সমান। পৃথিবী যে কক্ষপথ ধরে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে, তেমনই একটি কক্ষপথ ধরে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে 2025 PN7. পৃথিবী থেকে দূরত্ব ৪০ লক্ষ কিলোমিটার, চাঁদের তুলনায় ১০ গুণ বেশি দূরত্ব।
আগেও পৃথিবীর কাছাকাছি এমন আধা চাঁদের আবির্ভাব ঘটেছে। তবে এই ঘটনা একেবারে ব্যতিক্রম বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, পরস্পরের সঙ্গে কোনও যোগ না থাকা সত্ত্বেও সমান্তরাল ভাবে, প্রায় একই গতিতে পৃথিবীর সঙ্গে ঘুরে চলেছেন 2025 PN7. কখনও পৃথিবীর থেকে এগিয়ে যায়, কখনও আবার পিছনে পড়ে যায়।
2025 PN7-এর গতিপথ নির্ধারণ করে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, ছয়ের দশক থেকেই পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থান ছিল সেটির। ২০৮৩ সাল পর্যন্ত পৃথিবীকে সঙ্গ দেবে। এর পর ধীরে ধীরে পৃথিবীর থেকে দূরে সরে যাবে 2025 PN7. বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সূর্যই 2025 PN7-কে টেনে ধরে রেখেছে। তবে তার কক্ষপথ নির্ধারণে অন্য গ্রহগুলিরও ভূমিকা রয়েছে। যদিও অন্য কোনও গ্রহের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ খাটে না 2025 PN7-এর মতো মহাজাগতিক বস্তুর উপর। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর আটটি আধা চাঁদ আবিষ্কৃত হয়েছে।
2025 PN7 পৃথিবীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে মত বিজ্ঞানীদের। তবে সেটি বিজ্ঞানীদের গবেষণার কাজে সাহায্য় করবে। বিশেষ করে মহাকাশে অভিকর্ষ শক্তির কার্যকারিতা, গতিশীলতা, গ্রহাণুর গঠন, আচরণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে। ভবিষ্যতে পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থানে থাকা গ্রহাণু খুঁজে বের করার কাজও সহজ হবে আরও। এমনকি এই সব গ্রহাণুর উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোও সহজ।