নয়াদিল্লি: ধূমকেতু বলে চালানো হলেও, 3I/ATLAS কি আসলে ধূমকেতু নয়? সত্যিই কি ভিন্গ্রহী চর সেটি? যত দিন যাচ্ছে, জোরাল হয়ে উঠছে এই প্রশ্ন। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র বিরুদ্ধে সত্য গোপনের অভিযোগও উঠছে। উজ্জ্বল নীল আলো হোক বা অভিকর্ষ টান উপেক্ষা করে উড়ে বেড়ানো, 3I/ATLAS-এর আচরণ মোটেও ধূমকেতুসুলভ নয় বলে মনে করছেন মহাকাশবিদদের একাংশও। (3I/ATLAS Interstellar Comet)

Continues below advertisement

মঙ্গলের আকাশে অবির্ভাবের সময় থেকেই 3I/ATLAS-কে ঘিরে সন্দেহ গাঢ় হচ্ছিল, যা বর্তমানে ক্রমশ দৃঢ় হওয়ার পথে। সরকারি অচলাবস্থার জেরে এই মুহূর্তে আমেরিকায় NASA-র কাজকর্মও বন্ধ রয়েছে। 3I/ATLAS নিয়ে প্রশ্ন এড়াতে ইচ্ছাকৃত ভাবেই কাজকর্ম বন্ধ রাখা হয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ চিন এবং অন্য দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার নজরে এখনও পর্যন্ত 3I/ATLAS-এর যে গতিবিধি চোখে পড়েছে, তা সন্দেহ বাড়িয়ে তুলছে। (Interstellar Comet 3I/ATLAS)

3I/ATLAS-কে ঘিরে গত কয়েক দিনে বেশ কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা চোখে পড়েছে। প্রথমত, বার বার রং বদলেছে সেটি। সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছলে সাধারণত ধূমকেতুকে লাল দেখায়। চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ধূলিকণার উপর থেকে সূর্যালোক প্রতিফলিত হলেই এমন দেখায়। কিন্তু সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছেও 3I/ATLAS-কে নীলই দেখাচ্ছিল। বরং সেই আলো উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী তথা অধ্যাপক আভি লোবের দাবি, হতে পারে আপনা আপনি ছুটে চলছে না 3I/ATLAS. বরং ভিতর থেকে সেটিকে চালানো হচ্ছে। ভিতরে গরম ইঞ্জিন চলছে, যার দরুণ বেরোচ্ছে ওই কৃত্রিম আলো।

Continues below advertisement

সূর্যের যত কাছাকাছি পৌঁছয়, ততই ঔজ্জ্বল্য বাড়ে 3I/ATLAS-এর। গত ২৮ অক্টোবর অনুসূর অবস্থানে তার ঔজ্জ্বল্যের তীব্রতা ৯ ছিল বলে জানা যাচ্ছে।  পরবর্তীতে যা বেড়ে হয় ১১। এমনকি সূর্যের চেয়েও বেশি নীল হয়ে ওঠে সেটি। তবে সবচেয়ে বেশি যে ঘটনা নজর কেড়েছে সকলের, তা হল, সূর্যের কাছাকাছি অবস্থানে থেকেও, তার অভিকর্ষ টান উপেক্ষা করে, সূর্যের থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে নেয়  3I/ATLAS. জানা গিয়েছে, অনুসূর অবস্থানে থাকা অবস্থায়, সূর্যের থেকে কার্যতই পিছু হটে সেটি। দূরত্ব বাড়িয়ে নেয়। সোজা ছোটার পরিবর্তে, পার্শ্বাভিমুখে দৌড়চ্ছিল। বিজ্ঞানী লোবের মতে, ভিতর থেকে অন্য কিছু সেটিকে চালিত করছিল যেন।

আর তাতেই NASA-র বিরুদ্ধে সত্য গোপন করার অভিযোগ তুলছেন হার্ভার্ডের বিজ্ঞানী লোব। তাঁর কথায়, “মঙ্গলগ্রহের কাছাকাছি থাকাকালীন ২ অক্টোবর সবচেয়ে ভাল ছবি পাওয়া যায়। কিন্তু সেই ছবি প্রকাশ করেনি NASA. নিজে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রতিক্রিয়া মেলেনি কোনও।” তাহলে কি সত্যি তথ্য গোপন করছে NASA? তাঁর জবাব, “বহির্জগতের বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এটি, বরং পার্থিব মূর্খতা বলা যায়।”

চলতি বছরের ১ জুলাই 3I/ATLAS-এর সন্ধান পান বিজ্ঞানীরা। সেটিকে আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু বলে চিহ্নিত করে বিজ্ঞানীরা জানান, 3I/ATLAS বাইরে থেকে সৌরজগতে প্রবেশ করেছে। কোনও নক্ষত্রের অংশ সেটি। আমাদের সৌরজগত হয়ে ছুটে যাবে। কিন্তু গোড়া থেকেই এই দাবি ঘিরে বিতর্ক। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী লোব দাবি করেন, 3I/ATLAS মোটেই কোনও সাধারণ আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু নয়, বরং সেটি আসলে ভিন্গ্রহীদের মহাকাশযান। সৌরজগতের উপর চরবৃত্তির জন্য পাঠানো হয়েছে সেটিকে। সেই থেকে বিভিন্ন দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা তো বটেই, স্বাধীন ভাবে মহাকাশ গবেষণার কাজ চালিয়ে যাওয়া মানুষজনও 3I/ATLAS-এর উপর নজর রেখেছেন। লাগাতার, সোশ্য়াল মিডিয়ায় নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরছেন তাঁরা।