নয়াদিল্লি: ধীরে ধীরে সূর্যের দিকে এগিয়ে চলেছে ভারতের সৌরযান Aditya L-1. পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল সে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO শনিবার এই খবর জানিয়েছে। বলা হয়েছে, 'স্ফিয়ার অফ আর্থস ইনফ্লুয়েন্স'-এর বাইরে চলে গিয়েছে সৌরযান Aditya L-1. পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ৯.২ লক্ষ কিলোমিটার দূরে সরে গিয়েছে সেটি।- (Aditya-L1 Mission)
সৌরযান Aditya L-1-এর প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে দেশবাসীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অবগত করায় ISRO. শনিবার সন্ধেয় সোশ্যাল মিডিয়ায় সৌরযান Aditya L-1-র বর্তমান অবস্থান নিয়ে আপডেট প্রকাশ করা হয়। লেখা হয়, 'Aditya L-1- পৃথিবী থেকে ৯.২ লক্ষ কিলোমিটার দূরে পৌঁছে গিয়েছে সৌরযানটি, সফল ভাবে পৃথিবীর স্ফিয়ার অফ আর্থস ইনফ্লুয়েন্স-এর বাইরে চলে গিয়েছে। আপাতত সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যেকার ল্য়াগরেঞ্জ পয়েন্টের দিকে এগোচ্ছে'। (ISRO)
ISRO আরও জানিয়েছে, এই নিয়ে পর পর দ্বিতীয় বার পৃথিবীর 'স্ফিয়ার অফ আর্থস ইনফ্লুয়েন্স'-এর বাইরে সফল ভাবে মহাকাশযান পাঠাতে সক্ষম হল ISRO. এর আগে মঙ্গলগ্রহকে প্রদক্ষিণ করতে যখন 'মঙ্গলযান' পাঠানো হয়েছিল, সেবার সাফল্য় মিলেছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় 'স্ফিয়ার অফ আর্থস ইনফ্লুয়েন্স' হল, গোলাকার কোও মহাজাগতিক বস্তুর বাইরের বৃত্তাকার অঞ্চল, যার উপর মহাজাগতিক বস্তুটির নিয়ন্ত্রণ থাকে, প্রদক্ষণরত বস্তুটির উপর মহাজাগতিক বস্তুটির অভিকর্ষ শক্তি অনুভূত হয়। অর্থাৎ পৃথিবীর অভিকর্ষ শক্তি প্রভাবিত অঞ্চলের বাইরে চলে গিয়েছে সৌরযান Aditya L-1.
Aditya L-1 ভারতের প্রথম সৌরযান। পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরের, সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যেকার ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট (L1) থেকে সূর্যের উপর চালাবে সৌরযান Aditya L-1. গত ২ সেপ্টেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে Aditya-L1 সৌরযানের উৎক্ষেপণ হয়। মহাশূন্যে সূর্য এবং পৃথিবীর মতো দুই বস্তুর পারস্পরিক আকর্ষণ এবং বিকর্ষণের ফলে যে স্থিতিশীল অঞ্চল গড়ে ওঠে, তাকেই বলে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট। এই ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টকে মহাকাশযানের পার্কিং স্পটও বলা হয়। কারণ সেখানে কম জ্বালানি খরচ করে, মহাজাগতিক কর্মকাণ্ডের উপর নির্বিঘ্নে নজরদারি চালানো যায়।
সূর্যের যে আলোকমণ্ডল, অর্থাৎ চাকতির আকারে যে আলোর ছটা দেখা যায়, সেখানকার তাপমাত্রা কয়েক লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। সৌরস্পৃষ্ঠের চেয়েও বেশি তাপমাত্রা সূর্যের এই বহিরাবরণের। এর কার্যকারণও অত্যন্ত জটিল। তবে সহজ ভাবে বুঝতে গেলে মোমবাতির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। মোমবাতির শিখার কাছে গেলে যেমন গরম অনুভূত হয়, দূরে গেলে আবার স্বাভাবিক বোধ হয়, খনিকটা তেমনই। ব্রহ্মাণ্ড, পৃথিবী, গ্রহ, উপগ্রহগুলি কী ভাবে সূর্যের দ্বার প্রভাবিত, এই আলোকমণ্ডলের মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার নেপথ্যকারণই বা কী, তা পর্যবেক্ষণ করবে Aditya-L1 সৌরযান।