কলকাতা: সময় যত আধুনিক হচ্ছে, তত বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হচ্ছে যন্ত্রের উপর। কোভিড এবং কোভিড পরবর্তী সময়ে যা আরও বেশি করে প্রকট হয়েছে। কাজের তাগিদে সারাদিন ফোন-ল্যাপটপের সামনে বসে থাকা তো ছিলই। এবার সেটা বাড়ছে পড়াশোনার জন্য়ও। শুধু কলেজ বা স্কুলের উঁচু ক্লাস নয়, নীচু ক্লাস থেকেই অনলাইন ক্লাস, নানা ডিজিটাল অ্যাক্টিভিটি-প্রজেক্টের কারণে শিশু-কিশোরদের নির্ভরতাও বাড়ছে স্মার্টফোন-ল্যাপটপের উপর। বিশেষ করে উদ্বেগ রয়েছে স্মার্টফোন নিয়ে।
শিশু থেকে কৈশোর পেরিয়ে বড় হয়ে ওঠার সময়টাই আদতে Adolescence বা বয়ঃসন্ধি কাল। সাধারণত ১০-১৯ বছরের এই সময়সীমাকে এমনটা বলা হয়ে থাকে। কেরিয়ার থেকে শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য, ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠা- সবকিছুর জন্যই এই সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়েই দ্রুতবেগে শারীরিক, বৌদ্ধিক এবং মানসিক বৃদ্ধি হয়ে থাকে বলে জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট।
আর তখনই একটি গবেষণা দাবি করছে, এই বয়সকালে যাঁরা দিনে চার ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোনে বুঁদ হয়ে থাকে তাঁদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এমনকী নেশাদ্রব্যে ব্যবহারের ঝুঁকিও বেশি। এর আগে গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, সম্প্রতি এই বয়সসীমায় থাকা ছেলে-মেয়েদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহার বাড়ছে। তার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা, সাইক্রিয়াট্রিক ডিসঅর্ডার, ঘুমের সমস্যা, চোখের সমস্যা থেকে musculoskeletal disorders-এর মতো সমস্যার যোগ মিলেছিল। এই সমস্যা আরও খতিয়ে দেখতে এবং ওই বয়সের ছেলে-মেয়েদের মোবাইল ব্যবহারের সঙ্গে স্বাস্থ্য সমস্যার যোগ আরও খতিয়ে দেখতে একটি গবেষণা চালিয়েছিল কোরিয়ায় হ্যানয়াং বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার (Hanyang University Medical Center, Korea)। ওই গবেষক দল ৫০ হাজারের বেশি এই বয়সসীমায় থাকা ছেলে-মেয়েদের উপর পরীক্ষা করেছে।
ওই ছেলে-মেয়েরা দিনে কতক্ষণ স্মার্টফোন ব্যবহার করছে, কীভাবে ব্যবহার করছে তা দেখা হয়েছে এবং তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করানো হয়েছে। রাশিবিজ্ঞানের বিশেষ মডেল ব্যবহার করে, statistical analysis ব্য়বহার করে তথ্যের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই বয়সের যে ছেলে-মেয়েরা দিনে চার ঘণ্টার বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, তাদের স্ট্রেস অনেক বেশি। তারা আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে মাঝে মাঝে, এমনকী তাদের ক্ষেত্রে সহজেই নেশার কবলেও পড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি বলে দাবি করা হয়েছে এই রিপোর্টে। আবার যারা একেবারেই স্মার্টফোন ব্যবহার করে না তাদের তুলনায় যারা দিনে এক-দুই ঘণ্টা ব্যবহার করে তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা অনেকটাই কম। গোটা গবেষণাটাই PLOS ONE- জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই জার্নাল ওপেন অ্যাক্সেস হওয়ায় যে কেউ পড়তে পারবেন।
যদিও গবেষকরা দাবি করেছেন, এই সমীক্ষা বা গবেষণা স্মার্টফোন বা তার ব্যবহারের সঙ্গে এই ধরনের সমস্যার সরাসরি যোগ রয়েছে বলে এখনই দাবি করছে না। তবে যা তথ্য় পাওয়া গিয়েছে তা উদ্বেগের এবং তার উপর নির্ভর করে এই বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু গাইডলাইন আনা যেতে পারে, জানিয়েছেন হ্যানয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের Jin-Hwa Moon এবং Jong Ho Cha.
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্র-তেলঙ্গানায় বাড়ছে 'মাম্পস'-র দাপট, খুদে সদস্যকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাবেন কী ভাবে?