নয়াদিল্লি: সৌরজতের বাইরেও অজস্র গ্রহ-নক্ষত্র রয়েছে (Exoplanets)। সেখানেই একেবারে সৌরমণ্ডলের অনুরূপ, একটি নক্ষত্রমণ্ডলের হদিশ মিলল। সৌরজগতের বাইরে একটি নক্ষত্র এবং তাকে প্রদক্ষিণরত ছয়টি গ্রহের সন্ধান মিলেেছে। সমান তালে, প্রায় সমান গতিতে কেন্দ্রস্থলে থাকা সূর্যের মতো দেখতে একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে সৌরমণ্ডল বহির্ভূত গ্রহগুলি। কয়েকশো কোটি বছর ধরে, এভাবেই অবিচল গতিতে, পরস্পরের সমান্তরাল অবস্থানে থেকে নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে তারা। (Alien Worlds Discovered)


২৯ নভেম্বর Nature জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে সৌরমণ্ডলের বাইরে থাকা ওই নক্ষত্রমণ্ডল আবিষ্কারের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, অদ্ভূত অনুরণনের জন্যই নজর কেড়েছে ওই নক্ষত্রমণ্ডলটি। নক্ষত্রটিকে যে ছয়টি গ্রহ প্রদক্ষিণ করে চলেছে, তাদের গতি প্রায় সমান। নক্ষত্রটির সঙ্গে দূরত্বের নিরিখে বার্ষিকগতির সময়সীমায় রয়েছে ফারাক। নক্ষত্রের একেবারে কাছের গ্রহটি যে সময়ের মধ্যে ছ'বার নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করে, ওই সময়ের মধ্যে একবার বার্ষিক গতি পূর্ণ করে সবচেয়ে দূরের গ্রহটি। (Science News)


বাকি চারটি গ্রহের মধ্যেও এমন সমন্বয় রয়েছে। যে কারণে ওই ছয়টি গ্রহের বার্ষিক গতিকে 'মহাজাগতিক Waltz', বলরুম নাচের ছন্দের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। সৌরজগতের বাইরের এই নক্ষত্রমণ্ডলের নাম রাখা হয়েছে HD 110067. ইউনিভার্সিটি অফ বার্নের বিজ্ঞানী, গবেষণাপত্রটির লেখক হিউ অসবর্ন জানিয়েছেন, একাধিক কারণে সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত এই নক্ষত্রমণ্ডলটি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মধ্যে যে পারস্পরিক ছন্দ রয়েছে, এমন অনুরণন চোখে পড়ে না মহাজগতের অন্যত্র। একই সঙ্গে, যে নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করছে ওই ছয়টি গ্রহ, সৌরজগতের বাইরে আবিষ্কৃত নক্ষত্রগুলির মধ্য়ে সেটি এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে উজ্জ্বল। এর আগেও এমন নক্ষত্রমণ্ডলের হদিশ মিলেছে সৌরজগতের বাইরে, তবে কখনওই নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে চলা গ্রহের সংখ্য়া চারের বেশি ছিল না। সেই কারণেও এই নক্ষত্রটি ব্যতিক্রম।



গবেষকরা জানিয়েছেন, পৃথিবী থেকে ওই নক্ষত্রমণ্ডলটির দূরত্ব ১০০ আলোকবর্ষ। Coma Berenices নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে অবস্থিত সেটি। পৃথিবী এবং নেপচুনের মাঝামাঝি  প্রস্থ ওই ছয়টি গ্রহের। কেন্দ্রস্থলে থাকা নক্ষত্রটি উজ্জ্বল হলুদ রংয়ের। তাই তাদের 'মিনি নেপচুন' অথবা 'সাব নেপচুন'ও বলার পক্ষপাতী গবেষকরা। আকাশগঙ্গা ছায়াপথে এমন 'মিনি নেপচুন' আগেও দেখা গিয়েছে। তবে আমাদের সৌরজগতে তাদের অস্তিত্ব নেই। তাই HD 110067 নক্ষত্রমণ্ডলটির ভবিষ্যৎ কোন দিকে এগোয় এবং আমাদের সৌরজগতে এমন গ্রহ নেই কেন, তা নিয়ে গবেষণা করতে উদগ্রীব বিজ্ঞানীরা।


আরও পড়ুন: ISRO Next Mission: আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে এবার ভারতীয় মহাকাশচারী, কলকাতায় শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার নিতে এসে ঘোষণা সোমনাথের


ছয়টি গ্রহের মধ্যে সমান তাল-ছন্দ দেখে একটি ব্যাপারে নিশ্চিত বিজ্ঞানীরা যে, কোটি কোটি বছর ধরে শান্তিপূর্ণ ভাবে সহাবস্থান করছে তারা। তাদের কক্ষপথের কোনও পরিবর্তন হয়নি। সংঘর্ষ বাধেনি পরস্পরের সঙ্গে, ভরেও কোনও হেরফের হয়নি। ২০২০ সালে NASA-র ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট প্রথম HD 110067 নক্ষত্রমণ্ডলের নক্ষত্রটির আলো কিছুটা ম্রিয় হতে দেখে। তার পরই গবেষণায় নামেন বিজ্ঞানীরা। তাতে দেখা যায়, নক্ষত্রটির  সম্মুখভাগ হয়ে এগোচ্ছিল একটি গ্রহ, তাতেই কিছুটা ঢাকা পড়ে যায় নক্ষত্রটি। পরে আরও বেশ কয়েক বার এমনটা ঘটে। তাতেই বোঝা যায়, নক্ষত্রটিকে ঘিরে ছয়টি গ্রহ চক্কর কাটছে বলে।



এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা যে তথ্য় হাতে পেয়েছেন, তা হল, নক্ষত্রটির সবচেয়ে কাছের গ্রহটি ৯.১ দিনে তাকে প্রদক্ষিণ করে। দ্বিতীয়টি ১৩.৬, তৃতীয়টি ২০.৫, চতুর্থটি ৩০.৮, পঞ্চমটি ৪১ এবং একেবারে কিনারায় থাকা ষষ্ঠ গ্রহটি ৫৪.৭ দিনে নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর চেয়ে এই গ্রহগুলির ব্যাস দুই থেকে তিন গুণ বড়। মূলত বরফ এবং পাথর রয়েছে সেখানে। বায়ুমণ্ডলে রয়েছে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম। আগামী দিনে ওই নক্ষত্রমণ্ডলে আরও গ্রহের খোঁজ মেলাও অসম্ভব নয় বলে মত বিজ্ঞানীদের।