নয়াদিল্লি: পৃথিবীর একেবারে শেষ প্রান্ত। সেই আন্টার্কটিকাতেও হিংসা ছড়াল এবার। সাধারণ মানুষ নন, সেখানে প্রাণনাশের আশঙ্কা করছেন খোদ বিজ্ঞানীরা। সাহায্য চেয়ে কাতর আবেদন জানালেন তাঁরা। অভিযোগের তির বিজ্ঞানীদের ১০ জনের টিমের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে। তিনি মানসিক ভাবে অস্থির এবং আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ। সরকারি হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন বাকিরা। (Antarctica Scientists Seek Help)


Sunday Times এই  খবর সামনে এনেছে। তারা জানিয়েছে, আন্টার্কটিকার বরফের যে দেওয়াল রয়েছে, তার থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরত্ব দক্ষিণ আফ্রিকার গবেষণাকেন্দ্রের। সহজে সেখানে পৌঁছনোও সম্ভব নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে সেখানেই প্রাণনাশের আশঙ্কায় দিন গুনছেন বিজ্ঞানীরা। তীব্র ঠান্ডায় একে জমে যাওয়ার অবস্থা। সেই অবস্থাতেই প্রাণ হাতে করে থাকতে হচ্ছে। (Antarctica Research Team)


আন্টার্কটিকায় দক্ষিণ আফ্রিকার যে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালাচ্ছেন, তাঁরা নিজেদেরই এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। শারীরিক ভাবে আঘাত হানার পাশাপাশি, অভিযুক্ত বিজ্ঞানী বাকিদের খুনের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। অবিলম্বে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারকে বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। 


দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ মন্ত্রী ডিয়ন জর্জ অভিযোগ পাওয়ার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আন্টার্কটিকার গবেষণাকেন্দ্রে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত বিজ্ঞানী যদিও ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। অনুশোচনায় ভুগছেন তিনি। মানসিক চিকিৎসা চলছে ওঁর। কী নিয়ে ঝামেলা এতদূর গড়াল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার সূত্রে খবর, তীব্র ঠান্ডায় এক একজনের উপর এক একরকম কাজের দায়িত্ব বর্তায়। সেই কাজ বণ্টন নিয়েই ঝামেলা বাধে। 


দক্ষিণ আফ্রিকার ওই গবেষণাকেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়। তীব্র ঠান্ডায় দিনর পর দিন সেখানে থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যান বিজ্ঞানীরা। এই মুহূর্তে যাঁরা রয়েছেন সেখানে, এবছর ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁদের সেখানে থাকতেই হবে। তার পর SA Agulhas 2 জাহাজে চেপে বরফের সাম্রাজ্য থেকে নিষ্কৃতী মিলবে। এমন পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানীরা প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বন, মৎস্য এবং পরিবেশ মন্ত্রক তদন্ত শুরু করেছে। 


১৯৫৯ সালে আন্টার্কটিকায় নিজেদের গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। পাশাপাশি, Marion Island এবং Gough Island-এও গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে তাদের। তেব আন্টার্কটিকার গবেষণাকেন্দ্রে হিংসার ঘটনা এই প্রথম নয়। ২০১৭ সালে Marion Island-এর একটি গবেষণাকেন্দ্রে এক বিজ্ঞানী সহকর্মীকে আক্রমণ করেন। তরুণী সহকর্মী বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কুড়ুল দিয়ে ল্যাপটপে আঘাত করেন। 


এর আগে আন্টার্কটিকায় গবেষণা কের আসে গ্যাব্রিয়েল ওয়াকার  BBC-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করার কিছু ঝুঁকি রয়েছে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের খুঁটিনাটি কাজের দিকে নজর রাখেন। কখনও কখনও পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যায়। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেন না। কারণ আর কিছু করার নেই সেখানে। অপছন্দের মানুষের সঙ্গে যদি ২৪ ঘণ্টা সেভাবে কাটাতে হয়, তাতে সমস্যা হয়। 


তবে আন্টার্কটিকায় দক্ষিণ আফ্রিকার একটি জাহাজ রয়েছে, যেটি বরফ কেটে এগিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি একটি বিমানও রয়েছে জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা যায়। তবে উদ্ধারকার্য তখনই চালানো হয়, সে সময় পরিবেশ প্রাণধারণের জন্য কষ্টকর হয়ে ওঠে, তাপমাত্রা একেবারে নেমে যায় এবং তুষারঝড়ের দাপট তীব্র হয়ে ওঠে।