কলকাতা: যেদিকে চোখ যায় ধূ ধূ মরুপ্রান্তর। বালিয়াড়ি ছাড়া চোখে ধরা দেয় না অন্য কিছু। কিন্তু সেখানেই নাকি লুকিয়ে রয়েছে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে বড় রহস্য। মহাশূন্যের রহস্যময় জগৎ এবং পৃথিবীর মধ্যে নাকি সেতুবন্ধনের কাজ করে ওই মরুভূমি, দিন-ক্ষণ দেখে সেখানেই নাকি কোনও একসময় অবতরণ ঘটে ভিনগ্রহীদের। আজ নয়, বিগত কয়েক দশক ধরেই এই তত্ত্ব প্রচলিত। মাঝে মধ্যে থিতিয়ে গেলেও, ভিনগ্রহীদের কথা উঠলেই ঘুরেফিরে উঠে আসে ওই মরুভূমির উল্লেখ। ওই মরুভূমির সত্যতা লুকিয়ে রেখে আমেরিকা গোটা পৃথিবীর সঙ্গে তঞ্চকতা করছে বলে ওঠে অভিযোগ, মহাকাশপ্রেমীদের কাছে যা ‘Area 51 Conspiracy Theories’ নামে পরিচিত। (Area 51)
আমেরিকার নেভাডা প্রদেশের দক্ষিণে ধূ ধূ মরুপ্রান্তর এবং সেখানে অবস্থিত লবণাক্ত জলের Groom হ্রদের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি জায়গাকেই ‘Area 51’ বলে চিহ্নিত করা হয়। ওই জায়গাটিতে আমেরিকার বায়ুসেনার ঘাঁটি রয়েছে, যেখানে পরমাণু শক্তির পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় বলেও উল্লেখ রয়েছে আমেরিকার পরমাণু শক্তি কমিশনের মানচিত্রে। সেখানে একটি অজ্ঞাত পরিচয় যান (Unidentified Flying Object/UFO) ভেঙে পড়েছিল এবং তার মধ্যে থেকে ভিনগ্রহীদের দেহ উদ্ধার হয়েছিল বলে অভিযোগ। মার্কিন সরকারের হয়ে ওই ঘাঁটিতে কর্মরত এক রবার্ট ল্যাজার নামের এক ব্যক্তি এই দাবি করেন আটের দশকে। ভেঙে পড়া একটি UFO নিয়ে সেখানে গবেষণা চলছে বলে দাবি করেন। তিনি জানান, ‘Area 51’ –এর গবেষণাগারে ভিনগ্রহীদের ময়নাতদন্তের ছবি দেখেছেন তিনি। (Area 51 Conspiracy Theories)
১৯৫৫ সালে নেভাডা টেস্ট অ্যান্ড ট্রেনিং রেঞ্জ কমপ্লেক্স নামে আমেরিকার বায়ুসেনার ওই ঘাঁটিটি গড়ে ওঠে Groom হ্রদের পাশে। ‘প্যারাডাইস ব়্যাঞ্চ’ বলেও উল্লেখ করা হতো ওই ঘাঁটিকে। কারণ কর্মীদের সেখানে নিয়ে এসেই গবেষণামূলক কার্য পরিচালনা করত এ্যারোস্পেস কোম্পানি লকহিড (অধুনা লকহিড মার্টিন)। আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা CIA ওই জায়গাটিকে Groom Lake And Homey Airport বলেও উল্লেখ করে। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে ওই জায়গার ছবি তোলা নিষিদ্ধ। তবে ২০১৮ সালে Google Map-এ সেটির ছবি ধরা পড়ে। তবে চারের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই সেখানে UFO-র আনাগোনার খবর উঠে আসতে থাকে। আধুনিক উড়োজাহাজ বলে যদিও গুঞ্জন উড়িয়ে দেয় আমেরিকা সরকার।
আরও পড়ুন: Jo529-4351 Black Hole: রোজ গিলে নিতে পারে একটি করে সূর্য, খোঁজ মিলল বৃহত্তম কৃষ্ণগহ্বরের
১৯৫৯ সালের ১৭ জুন একটি সংবাদপত্র প্রথমে ওই জায়গায় UFO-র আনাগোনা নিয়ে খবর করে। সেখানে একাধিক বার আকাশে অজ্ঞাতপরিচয় যান উড়তে দেখা গিয়েছে বলে দাবি করে তারা। স্থানীয় পুলিশকর্তা সার্জেন্ট ওয়েন অ্যান্ডারসনকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, বিমানের থেকেও জোর গতিতে, উজ্জ্বল সবুজ আলো বসানো, চ্যাপ্টা এবং গোলাকার অজ্ঞাত পরিচয় যানকে সেখানে অবতরণ দেখেছেন তিনি। যদিও CIA-র দাবি ছিল, সেখানে গুপ্তচরদের জন্য তৈরি বিশেষ U-2 বিমানের পরীক্ষা চলছিল। কিন্তু CIA-র সেই দাবি কার্যতই ধোপে টেকেনি। সেই নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকে পরবর্তী কয়েক দশক পর্যন্ত। তথ্য জানার অধিকার আইনে CIA-র একটি গোপন নথি ফাঁস হয়ে গেলে U-2-র উল্লেখ মেলে। শেষ মেশ ২০১৩ সালে আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগ মেনে নেয় যে, ওই এলাকাই আসলে ‘Area 51’.
বর্তমান দিনেও ওই জায়গায় প্রবেশের অনুমতি নেই সাধারণ মানুষের।যদিও বা কেউ ঢুকতে পান, ছবি তোলা নিষিদ্ধ ভিতরে। চারিদিকে স্তম্ভ বসানো রয়েছে। বিনা অনুমতিতে ভিতরে প্রবেশ করলে মোটা টাকার জরিমানা হবে বলে টাঙানো রয়েছে প্ল্যাকার্ডও। সরকারি নির্দেশ এবং নিরাপত্তার ঘেরাটোপ পেরিয়ে সেখানে প্রবেশে সফল হননি কেউ। কিন্তু এত রাখঢাক কেন, প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। কী এমন রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের সামনে আনা হচ্ছে না, যুগ যুগ ধরে প্রশ্ন তুলছেন বহু মানুষ।
১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত উইলস স্মিথ অভিনীত ‘Independence Day’ ছবিতেও ‘Area 51’-এর একটি ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়। পরবর্তীতে Marvel Cinematic Universe-এর অন্তর্ভুক্ত ‘Agents of Shield’-এর সপ্তম সিজনেও ‘Area 51’-এর উল্লেখ মেলে। ২০১৯ সালে নতুন করে বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়। সেখানে আসলে কী ঘটে, তা জানতে আহ্বান জানানো হয় সকলকে। পরিকল্পনা ছিল জনস্রোত গিয়ে আছড়ে পড়বে ওই এলাকায়। কী ঘটছে, তার রহস্য উদঘাটন করবে। সাকুল্যে ৬০০০ মানুষই জড়ো হয়েছিলেন সেবার। কিন্তু নিরাপত্তার বলয় ভেদ করে ভিতরে ঢোকার সাহস দেখাননি কেউ। তাই ভিনগ্রহীদের অবতরণের দাবিতে সিলমোহর পড়েনি আজও। তবে ওই ঘাঁটি থেকে U-2, A-12-এর মতো বায়ুসেনার বিমান এবং F-117-এর মতো শত্রুর চোখে ধুলো দিয়ে আঘাত হানার যুদ্ধবিমান তৈরি হয়ে বেরিয়েছে।