নয়াদিল্লি: দূর থেকে দেখে নক্ষত্র বলে মনে হয়েছিল। ভুল ভাঙল দূরত্ব কমতেই। মহাশূন্যে এযাবৎকালীন উজ্জ্বলতম, সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল, দানবীয় কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। আড়ে-বহরে এতই বড় ওই কৃষ্ণগহ্বর যে রোজ সূর্যের সমান মহাজাগতিক বস্তুসমূহ উদরস্থ করে সেটি, যা দেখে স্তম্ভিত সকলে। (Jo529-4351 Black Hole)


উজ্জ্বলতম ওই কৃষ্ণগহ্বরটির নাম রাখা হয়েছে Jo529-4351. বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবী থেকে ওই কৃষ্ণগহ্বরের দূরত্ব প্রায় ১২০০ কোটি আলোকবর্ষ। ১৭০০ থেকে ১৯০০ কোটি সৌরভরের মধ্যে ওজন সেটির। অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ডের বয়স যখন মাত্র ১৫০ কোটি বছর, সেই সময় ওই কৃষ্ণগহ্বরের সৃষ্টি হয় বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। (J0529-4351 Quasar)


মহাকাশ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে এখনও পর্যন্ত যে তথ্য উঠে এসেছে, সেই অনুযায়ী, বৃহদাকার নক্ষত্রগুলি পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খেলে, চারপাশের সবকিছু তার ভরকেন্দ্রে ঢুকে যায়। গ্যাস, ধুলো, গ্রহ এমনকি ছোটখাটো কৃষ্ণগহ্বরও সেই বিস্ফোরণের মধ্যে ঢুকে যায়। সেই থেকেই পরবর্তী কালে জন্ম নেয় কৃষ্ণগহ্বর।


আরও পড়ুন: Minimoons of Earth: পৃথিবীকে ঘিরে একাধিক Minimoon, তাতে ভর করেই আন্তঃগ্রহী হয়ে উঠবে মানুষ?


বিজ্ঞানীদের মতে, তীব্র ঘর্ষণের ফলে চারপাশের বস্তুসমূহ পাক খেতে খেতে বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট হাঁ মুখে ঢুকে যায়। সেগুলি উত্তপ্ত হয়ে ঠিকরে আলো বেরোয়, যা টেলিস্কোপ দ্বারা শনাক্ত করা যায়। ওই বস্তুসমূহ সক্রিয় গ্যালাকটিক নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়, যা মহাশূন্যের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক শক্তি সম্পন্ন বস্তু। এগুলি কৃষ্ণগহ্বর দ্বারা পরিচালিত হয়, যার ওজনে সূর্যের চেয়ে কয়েক কোটি গুণ ভারী। এই কৃষ্ণগহ্বরগুলি থেকে আবার আলোর বিস্ফোরণ ঘটে, যা তাবড় নক্ষত্রের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল।


২০২২ সালে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির Gaia মহাকাশযান প্রথম এই ধরণের মহাজাগতিক বস্তুর হদিশ পায়। আকাশগঙ্গা ছায়াপথের অন্তর্গত ২০০ নক্ষত্রের গতিবিধি এবং অবস্থান নিয়ে এখনও গবেষণা চালাচ্ছে Gaia. সাধারণত এই ধরনের মহাজাগতিক বস্তু নক্ষত্রের মতোই উজ্জ্বল হয়। কিন্তু J0529-4351 কৃষ্ণগহ্বরটিকে চিনতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। কারণ টেলিস্কোপ দিয়ে দেখার সময় আকারে তেমন কোনও ফারাক চোখে পড়েনি। 


টেলিস্কোপ আলাদা করে শনাক্ত করতে না পারায় কোনও কৃষ্ণগহ্বরকে চিনতে ভুল হয়েছে  কি না, সম্প্রতি নতুন করে তা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়, আর তাতেই J0529-4351-কে কৃষ্ণগহ্বর বলে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। পরে আটাকামা মরুভূমিতে অবস্থিত বৃহদাকার টেলিস্কোপে চোখ রেখে বোঝা যায়, ওই মহাজাগতিক বস্তু কোনও নক্ষত্র নয়, বরং বৃহদাকার কৃষ্ণগহ্বর। ১৯ ফেব্রুয়ারি Nature জার্নালে এই গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। 


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবী থেকে কৃষ্ণগহ্বরটির  দূরত্ব এবং তার ঔজ্জ্বল্যের নিরিখে যে হিসেব সামনে এসেছে, সেই অনুযায়ী, ওই কৃষ্ণগহ্বরটির শক্তি ৫০ লক্ষ সূর্যের সমান। বিজ্ঞানীদের মতে, কৃষ্ণগহ্বরটি এতই বড় এবং এত দ্রুত সে সবকিছু গিলে নিচ্ছে যে, সেটি Eddington Limit-এ পৌঁছে গিয়েছে, অর্থাৎ আকারের নিরিখে ঔজ্জ্বল্যের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। J0529-4351 কৃষ্ণগহ্বরটিকে পর্যবেক্ষণ করে কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে বিশদ তথ্য মিলতে পারে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।