নয়াদিল্লি: আয়তনে নাগরদোলার সমান। বছরের নির্দিষ্ট সময় আকাশে উদয় ঘটে। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে পাক খেয়ে বেড়ায়। মহাশূন্যের গভীর থেকে আচমকা উদয় হয়নি ওই গ্রহাণুটি, বরং সেটি চাঁদ থেকে ছিটকে যাওয়া প্রস্তরখণ্ড বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। (Science News)


প্রতি বছর এপ্রিল মাসে আকাশে আবির্ভাব ঘটে কামোওয়ালেওয়া (Asteroid Kamo'oalewa) নামের ওই গ্রহাণুর, হাওয়াইয়ের ভাষায় যার অর্থ হল দোদুল্যমান খণ্ড। প্রতি বছর এপ্রিল মাসে পৃথিবী থেকে ৯০ মাইল দূরত্বে উদয় হয় সেটি। আয়তনে প্রকাণ্ড নাগরদোলার সমান। এতদিন ধরে সেটিকে পর্যবেক্ষণ করে বিশদ তথ্য প্রকাশ করলেন বিজ্ঞানীরা।


২০১৬ সালে কামোওয়ালেওয়া নামের ওই গ্রহাণুটির হদিশ পান বিজ্ঞানীরা। সেটির উৎপত্তি নিয়ে এতদিন অন্ধকারে ছিলেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণা চলাকালীন ২০২১ সালে জানা যায়, ওই গ্রহাণুর সঙ্গে চাঁদের গঠনগত মিল রয়েছে। সেই দাবিতে এবার সিলমোহর পড়ল।


গত ২৩ অক্টোবর কমিউনিকেশন্স আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট নামের জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ওই গ্রহাণুটিকে চাঁদের খণ্ড বলে দাবি করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রাচীন কালে গ্রহাণু আছড়ে পড়াতেই চাঁদের থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে থাকবে ওই প্রস্তরখণ্ডটি। শুধুমাত্র কামোওয়ালেওয়াই নয়, এমন আরও একাধিক প্রস্তরখণ্ড, চাঁদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাশূন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে গবেষণাপত্রটিতে।


আরও পড়ুন: Science News: সবুজে ঘেরা উপত্যকা, নদীর পাড়ে বসবাস, আন্টার্কটিকার নিচে মিলল রহস্যেঘেরা এলাকা!


ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনার গ্রহবিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানী তথা গবেষণাপত্রের লেখিকা রেণু মালহোত্র বলেন, “কামোওয়ালেওয়া গ্রহাণুটি চাঁদেরই অংশ বলে প্রমাণের চেষ্টা করছি আমরা।”


কামোওয়ালেওয়া গ্রহাণুটিকে ঘিরে কৌতূহলের নেপথ্যে রয়েছে একটি ঘটনা। পৃথিবীর কাছাকাছি ঘুরতে থাকাটি ওই গ্রহাণুর উপর প্রথম নজর পড়ে বিজ্ঞানীদের। পৃথিবীকেই সেটি প্রদক্ষিণ করছে বলে প্রথমে ধারণা জন্মায় বিজ্ঞানীদের। পরে দেখা যায়, সেটি আসলে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে, অর্থাৎ সেটি একটি কোয়াসি উপগ্রহ বা অর্ধেক উপগ্রহ। যে সময়কাল ধরে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে সে, তা পৃথিবীরই সমান। সাধারণত গ্রহাণুরা কয়েক দশক ধরেই পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থান করে। কিন্তু কামোওয়ালেওয়া গ্রহাণুটি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পৃথিবীর কাছাকাছি রয়েছে।


এই অস্বাভাবিকতাই বিজ্ঞানীদের বিষয়টি নিয়ে গবেষণার দিকে ঠেলে দেয়। তাতে তার বর্ণচ্ছটার সঙ্গে চাঁদের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। চাঁদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া গ্রহাণুরা একদিন না একদিন চাঁদের মাটিতেই আছড়ে পড়বে, নইলে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসবে বলেই এতদিন ধারণা ছিল বিজ্ঞানীদের। কিন্তু কামোওয়ালেওয়া সেই দিক থেকে আলাদা। কারণ সেটি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে না। প্রদক্ষিণ করছে সূর্যকে। চাঁদ থেকে এত দূরে কী করে ছিটকে গেল গ্রহাণুটি, আপাতত তার কারণ খুঁজে বের করতে ব্যস্ত বিজ্ঞানীরা।