নয়াদিল্লি: রাতের আকাশ থেকে কার্যত উবে গেল আস্ত একটি নক্ষত্র। তন্নতন্ন করে খুঁজেও দেখা মিলছে না নক্ষত্রটির। বরং সেই জায়গায় আবির্ভাব ঘটেছে একটি কৃষ্ণগহ্বরের। গোটা ঘটনায় হতভম্ব জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। মহাজাগতিক বিস্ফোরণের ফলেই এমনটা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। মহাশূন্যের বুকে এই মুহূর্তে ওই নক্ষত্রটির কোনও চিহ্ন পড়ে নেই। (M31-2014-DS1 Failed Supernova)
রাতের আকাশ থেকে যে নক্ষত্রটি গায়েব হয়ে গিয়েছে, সেটির নাম M31-2014-DS1. পৃথিবী থেকে ২৫ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে সেটির অবস্থান ছিল। ভর ছিল আমাদের সূর্যের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথেই নক্ষত্রটি বিরাজ করছিল। ২০১৪ সালে সেটির ঔজ্জ্বল্য বাড়লেও, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে নিভু নিভু হচ্ছিল ক্রমশ। একটা সময় পর জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চোখের সামনে কার্যত গায়েব হয়ে যায়। (Science News)
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই ধরনের নক্ষত্রগুলির প্রাণ যখন শেষ হয়ে আসে, মহাকাশে তীব্র আলো-সহকারে বিস্ফোরণ ঘটে, যাকে Supernova বলা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে এমন কোনও আলোক-বিস্ফোরণ চোখে পড়েনি। নিঃশব্দে নক্ষত্র উবে যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম বলে দাবি করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাঁরা এই ঘটনাকে 'ব্যর্থ মহাজাগতিক বিস্ফোরণ' বা 'Failed Supernova' বলে উল্লেখ করছেন।
গত ১৮ অক্টোবর কর্নেল ইউনিভার্সিটির arxiv ওয়েবসাইটে নয়া গবেষণাপত্রে গোটা ঘটনাটির বিবরণ রয়েছে। পর্যালোচনার জন্য সেটি আপাতত রাখা হয়েছে। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এত বড়, উচ্চ ভরযুক্ত নক্ষত্রের উবে যাওয়ার নজর নেই। কোনও আলোক-বিস্ফোরণ ঘটেইনি এক্ষেত্রে। তাই একে 'ব্যর্থ মহাজাগতিক বিস্ফোরণ' বলা যেতে পারে।
নক্ষত্রের আয়ু যখন শেষ হয়ে আসে, পারমাণবিক বিক্রিয়া ঘটে হাইড্রোজেন হিলিয়ামে পরিণত হয়। সমস্ত শক্তি ছিটকে বেরোতে থাকে। হাইড্রোজেনের জোগান কমে আসে, জ্বলন্ত নক্ষত্র তুলনামূলক ভারী উপাদানগুলিতে গলাতে শুরু করে। এতে নক্ষত্রের অন্তঃস্থল প্রতিক্রিয়াহীন লোহায় ভরে যায়। এর ফলে গোটা প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে আসে। বাহ্যিক শক্তি হ্রাস পায় এবং নক্ষত্রগুলির অভ্যন্তরমুখী ক্ষয় শুরু হয়।
আমাদের সূর্যের চেয়ে আটগুণ বড় যে নক্ষত্রগুলি, তাদের ক্ষেত্রে ওই সময় তাপমাত্রা হঠাৎ করে কমে যায়। সেই সময় মাধ্যকর্ষণ শক্তি তীব্র হয়ে উঠলে তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। ভেঙে পড়ে নক্ষত্রটি, পড়ে থাকে শুধু অন্তঃস্থলের অংশ, যাকে নিউট্রন নক্ষত্র বা নক্ষত্রের মৃত দেহাবশেষ বলা হয়। তবে সব নক্ষত্রের মৃত্যুতে মহাজাগতিক বিস্ফোরণ নাও ঘটতে পারে বলে মত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের। অন্তঃস্থল থেকে সবকিছু ছিটকে বেরনোর আগেই নক্ষত্রগুলি কৃষ্ণগহ্বরে পরিমত হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছিল। M31-2014-DS1-এর ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। নিঃশব্দে মৃত্যুবরণ করে সেটি কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়েছে বলে দাবি গবেষকদের। এই প্রথম হাতেকলমে এমন ঘটনার প্রমাণ মিলল বলে মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।