নয়াদিল্লি: নাগালের মধ্যে চলে আসা মহাজাগতিক বস্তুকে কৃষ্ণগহ্বর গিলে ফেলছে, এমন নজির রয়েছে বহু। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনার সাক্ষী হলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। উজ্জ্বল এবং বৃহদাকার একটি নক্ষত্রকে, কৃষ্ণগহ্বর বা তার মতো দেখতে ডার্ক ম্যাটারকে আস্ত গিলে ফেলতে দেখা গিয়েছে বলে জানালেন তাঁরা। তবে উত্তেজনার বশে গিলে ফেললেও, হজম করতে পারেনি। বরং মুহূর্তের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় নক্ষত্রটি। পড়ে থাকে শুধুমাত্র কৃষ্ণগহ্বরটিই। (Science News)


৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত 'সায়েন্স' পত্রিকায় বিষয়টি সামনে এসেছে। নিউ মেক্সিকোর মরুভূমিতে বসানো ২৭টি বৃহদাকার চাকতি যুক্ত শক্তিশালী টেলিস্কোপে বিষয়টি ধরা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে অতি সম্প্রতি নয়, ২০১৭ সালে মহাশূন্যে এই রোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটে বলে জানা গিয়েছে। সহসা শক্তিশালী আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে যায় সকলের। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে আসল ঘটনা। (Space Science)


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবী থেকে ৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি ছায়াপথে এই বিস্ফোরণটি ঘটে। বামনাকার একাধিক নক্ষত্র নিয়ে তখনও একটু একটু করে গড়ে উঠছিল ছায়াপথটি। তাই ওই বিস্ফোরণে হতচকিত হয়ে পড়েন বিজ্ঞানীরা। ক্যালটেকের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডিলন দং জানিয়েছেন, টেলিস্কোপে চোখ রেখে তাঁরা দেখতে পান, একটি জায়গা থেকে চারিদিকে ছিটকে পড়ছে মহাজাগতিক বস্তুসমূহ, যার গতিবেগ কমপক্ষে ৩২ লক্ষ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। ফলে কোনও নক্ষত্রে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে নিশ্চিত হয়ে যান তাঁরা। 


আরও পড়ুন: Chandrayaan-3 Update: চাঁদের বুকে এখনও 'ঘুমিয়ে' বিক্রম, প্রজ্ঞান? ইসরোর ডাকে দিল কি সাড়া?


এর পর আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে বসানো Monitor for All Sky X-ray Image (MAXI) টেলিস্কোপ থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। সেখানে যদিও ঢের আগেই, ২০১৪ সালে বিষয়টি ধরা পড়ে। সব তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা চালিয়ে শেষ মেশ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন ক্যালটেকের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, বহু বছর আগে একসঙ্গে দু'টি নক্ষত্রের জন্ম হয়। পরস্পরের চারিদিকে চক্কর কেটে বেড়াচ্ছিল তারা। এর মধ্যে একটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। সেটি মারা যায়। পরবর্তীতে ওই মৃত নক্ষত্র নিউট্রন স্টার অথবা কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়। 


দীর্ঘ দিন এভাবেই পাশাপাশি অবস্থান করছিল ওই দুই নক্ষত্র। কিন্তু অভিকর্ষ শক্তির প্রভাবে একটা সময় আরও কাছাকাছি এসে পড়ে তারা। তাতে জীবিত নক্ষত্রটির শরীরে প্রবেশ করে মৃত ওই নক্ষত্র বা কৃষ্ণগহ্বরটি। এভাবে বেশ কয়েকশো বছর জীবিত নক্ষত্রটির উদরে ঘুরে বেড়ায় মৃত নক্ষত্রটি। একসময় জীবিত নক্ষত্রটির নিজের পেটে চালান করে দেয় সে। তার পর নীচের দিকে ধাবিত হয়ে। এর ফলে জীবিত নক্ষত্রটির অভ্যন্তরে টানাপোড়েন শুরু হয় প্রচুর পরিমাণ গ্যাস এবং ধুলো নির্গত হয়ে ঢেকে যায় চারিদিক। তার পরই একটা সময় তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে।