নয়াদিল্লি : পৃথিবীর উচ্চমাত্রার এনার্জি ইলেক্ট্রন (Electrons) থেকেই সম্ভবত জলের অস্তিত্ব চাঁদে। ভারতের চন্দ্র অভিযান চন্দ্রযান-১ (Chandrayaan-1) থেকে রিমোট সেন্সিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এমনই সম্ভাবনার কথা জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমেরিকার মানোয়ার হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাঁদের মতে, পৃথিবীর প্লাজমা শিটে থাকা ইলেক্ট্রনের ভূমিকা রয়েছে আবহাওয়া-প্রক্রিয়ায়। এই ইলেক্ট্রন চন্দ্রপৃষ্ঠে শিলা বা খনিজগুলি ভেঙে ফেলছে বা দ্রবীভূত করছে। এই সংক্রান্ত গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে Nature Astronomy জার্নালে। 


চাঁদে জলের ঘনত্ব দেখে তার গঠন-প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন। স্বাভাবিকভাবেই ভবিষ্যতে সেখানে মানুষের বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় জলের উৎসও রয়েছে কি না তার ধারণা করা বেশ কষ্ঠসাধ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, নতুন গবেষণা জল বরফের উৎস ব্যাখ্যায় সাহায্য করতে পারে। 


চাঁদে জলের অণু আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল এই চন্দ্রযান-১। ২০০৮ সালের এই অভিযানই চাঁদে চন্দ্রযান পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত উদ্যোগের প্রথম পদক্ষেপ ভারতের। সেই চন্দ্রযানের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী গবেষক দলটি পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র অতিক্রম করার সময় চন্দ্রপৃষ্ঠে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি পরিবর্তনের বিষয়টিও লক্ষ্য করেছে। এই পৃষ্ঠদেশটি এমন একটি অংশ যা সৌর বায়ু থেকে চাঁদকে রক্ষা করছে। তবে, সূর্যের আলোর ফোটোন থেকে রক্ষা করতে পারে না।


হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোয়া স্কুল অফ ওসিয়ন-এর সহকারী অধ্যাপক শুই লি বলছেন, "চাঁদ যখন চৌম্বকক্ষেত্রের বাইরে থাকছে, তখন চন্দ্রপৃষ্ঠে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে সৌর বায়ু। আর চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে থাকে না কোনও সৌর বায়ু প্রোটোন, এমনকী জল উৎপাদনের সম্ভাবনাও হয়ে যায় শূন্য। তবে, রিমোট সেন্সিংয়ের তথ্যের ভিত্তিতে এটা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি যে, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে জল উৎপাদন অনেকটা চাঁদ যখন পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের বাইরে থাকছে তার মতোই।" গবেষণা বলছে, জংলা চাঁদের মেরু নিয়ে পরীক্ষায় এই ইঙ্গিত মিলছে যে, বিভিন্ন অনাবিষ্কৃত বৈশিষ্ট্যে চাঁদের সঙ্গে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িত আমাদের এই পৃথিবী।  


প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে চন্দ্রযান-১ এর যাত্রা শুরু করেছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ISRO। ২০০৯-এর অগাস্ট পর্যন্ত তা চলে। সম্প্রতি সফলভাবে চন্দ্রযান-৩ পাঠায় ভারত। গত মাসেই রোভার ও ল্যান্ডার-যুক্ত সেই যান অবতরণ করে চাঁদের রহস্য ঘেরা দক্ষিণ মেরুতে। পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসাবে এই সাফল্য অর্জন করেছে ভারত।