নয়াদিল্লি: দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটল অবশেষে। পূর্ব ঘোষণা মতোই বুধের সন্ধেয় চাঁদের মাটি ছুঁল ভারত। চন্দ্রপৃষ্ঠে সফল অবতরণ চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের ল্যান্ডার 'বিক্রমে'র। আর তার হাত ধরেই মহাকাশ গবেষণার জগতে নতুন যুগের সূচনা হল। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছনো প্রথম দেশ হিসেবেই নয়, পালকের মতো চাঁদের মাটি ছোঁয়া চতুর্থ দেশ হিসেবেও ইতিহাসে নাম উঠল ভারতের। (Chandrayaan 3 Landing Successful)
চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের ল্য়ান্ডার 'বিক্রম' কখন চাঁদের মাটিতে নামবে, গত কয়েক দিন ধরেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল গোটা দেশ। ভারতীয় সময় অনুযায়ী, বিকেল ৫টা বেজে ৪৫ মিনিটে অধোগমনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে, সন্ধে ৬টা বেজে ৪ মিনিটে শেষ মেশ চাঁদের মাটিতে পদার্পণ করে ল্যান্ডার 'বিক্রম'। (Chandrayaan 3 Touches Moon)
চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের আগে, গত দু'দিনে দফায় দফায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয় ল্যান্ডার 'বিক্রমে'র। ইঞ্জিন থেকে যন্ত্রাংশ, কোথাও কোনও গলদ বা ত্রুটি রয়েছে কিনা, শেষ মুহূর্তে কোনও বিপত্তি বাধতে পারে কিনা, বার বার করে তা খতিয়ে দেখেন বিজ্ঞানীরা। যথেষ্ট সময় নিয়েই কার্য সম্পাদন করা হয়, যাতে তাড়াহুড়োতে কিছু চোখ এড়িয়ে না যায়। তাতেই সুফল মিলল।
২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ অভিযানে ঠিক শেষ মুহূর্তে বিপত্তি বাধে। পালকের মতো চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পরিবর্তে, আছড়ে ভেঙে পড়ে চাঁদের বুকে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই, এবার ধীরস্থির গতিতে গোটা অভিযান এগিয়ে আনা হয়। ল্যান্ডার 'বিক্রম'ও আগের চেয়ে ঢের বেশি শক্তপোক্ত এবং মজবুত। শুধু তাই নয়, সেন্সরেও পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর বন্ধুর, খানাখন্দে ভরা মাটি আদৌ অবতরণের উপযুক্ত কিনা, তা মাটি ছুঁয়েই টের পেয়ে যায় সেন্সর। উন্নত ক্যামেরার সাহায্যে বেছে নেয় অবতরণের উপযুক্ত ক্ষেত্র। সেই মতোই পালকের মতো মাটি ছোঁয় ল্যান্ডার 'বিক্রম'।
২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পর, গত চার বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চন্দ্রযান-৩ তৈরি করেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়াররা। চলতি বছরের ৬ জুলাই আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতের তৃতীয় চন্দ্রাভিযান, চন্দ্রযান-৩ অভিযানের ঘোষণা হয়। সেই মতো ১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের সফল উৎক্ষেপণ হয়। এর পর ধাপে ধাপে পৃথিবীর মাধ্যকর্ষণ শক্তির বাইরে বেরিয়ে, চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে। সবশেষে, উৎক্ষেপণের ৪১ দিনের মাথায় চাঁদের মাটি ছুঁল চন্দ্রযান-৩।