নয়াদিল্লি: চাঁদের বুকে আঁধার কেটে ফুটতে চলেছে আলো। তাতে নড়েচড়ে বসল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-ও। চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের ল্যান্ডার 'বিক্রম' (Lander Vikram) এবং রোভার 'প্রজ্ঞানে'র (Rover Pragyan)  ঘুম ভাঙানোর তৎপরতা শুরু হল সেখানে। ২২ সেপ্টেম্বর চাঁদের বুকে ভোরের আলো ফুটতে চলেছে। ওই দিনই ল্যান্ডার 'বিক্রম' এবং রোভার 'প্রজ্ঞানে'র ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করবেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। (Chandrayaan-3)


পৃথিবীতে যেমন ২৪ ঘণ্টায় একদিন হয়, এক চন্দ্রদিবস বলতে পৃথিবীর হিসেবে ১৪ দিনকে বোঝায়। পৃথিবীর হিসেবে ধরলে, ১৪ দিন চাঁদের উপর সূর্যের আলো পড়ে, তখন হয় দিন। তার পরের ১৪ দিন আবার ঘুটঘুটে অন্ধকার। তখন হয় রাত। পৃথিবীর হিসেবে ল্যান্ডার 'বিক্রম' এবং রোভার 'প্রজ্ঞানে' চন্দ্রপৃষ্ঠে পা রাখার ১২ দিন পর চাঁদে রাত্রি নামে। গোড়াতে ১৪ দিনের মাথায় ঘুম পাড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু সূর্যের অবস্থানের নিরিখে সময়ের আগে ঘুম পাড়ানো হয় তাদের।


রাত্রিকালে চাঁদের তাপমাত্রা অত্য়ন্ত কমে যায়। ওই ঠান্ডায় ল্যান্ডার 'বিক্রম' এবং রোভার 'প্রজ্ঞানে'র পক্ষে টিকে থাকা অসম্ভব। তাই রাত্রি নামার আগেই, নিরাপদ জায়গায় ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয় ল্যান্ডার 'বিক্রম' এবং রোভার 'প্রজ্ঞান'কে। ১৪ দিন ব্যাপী এই নিদ্রা থেকে উঠে ল্যান্ডার 'বিক্রম' এবং রোভার 'প্রজ্ঞান' ফের কাজে ফিরবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল গোড়া থেকেই। 


আরও পড়ুন: Science News: ভেবেছো দেখেছো কি...তারারা পরস্পরের থেকে কত দূরে! উত্তর দিচ্ছে বিজ্ঞান


কিন্তু চেষ্টা ছাড়ছেন না ISRO-র বিজ্ঞানীরা। কোনও ভাবে যদি ল্যান্ডার 'বিক্রম' এবং রোভার 'প্রজ্ঞানে'র ঘুম ভাঙানো সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে ফের চন্দ্রপৃষ্ঠে অনুসন্ধান চালাতে পারবে তারা। যদি তা সম্ভব হয়, তাহলে ISRO-র জন্যও তা বড় সাফল্য হিসেবে গন্য হবে। এর ফলে আগামী দিনে চন্দ্রপৃষ্ঠে আরও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চালাতে পারবে তারা। 


গত ২৩ অগাস্ট চন্দ্রপৃষ্ঠে পা রাখে ল্যান্ডার 'বিক্রম'। যেখানে অবতরণ করে ভারতের মহাকাশযানটি, তার নামকরণ হয়েছে শিবশক্তি। চাঁদের কোনও বায়ুমণ্ডল নেই। রাত্রিকালে চাঁদের বুকে তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর যেখানে সূর্যের আলো একেবারেই পৌঁছয় না, সেই সব জায়গায় তাপমাত্রা মাইনাস ২৪০ ডিগ্রি পর্যন্তও নেমে যায়। 


ল্যান্ডার 'বিক্রম' মূলত সৌরশক্তির সাহায্য়ে চালিত। ছোট আকারের ব্যাটারিও রয়েছে। এর ফলে ওজন হালকা। কিন্তু তীব্র ঠান্ডায় কাজ করতে পারে না। এর পরিবর্তে লিথিয়াম আয়ন ব্যবহার করা যায় যদিও। প্রতিকূল পরিবেশ এবং প্রচণ্ড ঠান্ডাতেও দিব্যি কাজ করে যেতে পারে। কিন্তু এই ব্যাটারি ওজনে ভারী হয়।  ঘুম ভাঙানোর জন্য ল্যান্ডার 'বিক্রমে' কোনও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে কিনা জানা যায়নি এখনও পর্যন্ত। তবে এমন কিছু ব্যবস্থা থাকলে ল্যান্ডার 'বিক্রম' এবং রোভার 'প্রজ্ঞানে'র  ঘুম ভাঙাতে তেমন সমস্যার কিছু নেই বলে মত বিজ্ঞানীদের একাংশের।