নয়াদিল্লি: মহাকাশে রান্নাবান্না করে নজির গড়লেন চিনা মহাকাশচারীরা। চিনা বিজ্ঞানীরা নিজেদের তৈরি স্পেস স্টেশন Tiangong-এ সওয়ার রয়েছেন এই মুহূর্তে। পৃথিবীর চারিদিকে চক্কর কেটে চলেছেন লাগাতার। আর সেই অবস্থাতেই মহাকাশে রান্না করে খাবার খেলেন তাঁরা। বলা বাহুল্য, আগুন জ্বেলে বা ইনডাকশনে নয়, বরং বিশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি ওভেনে খাবার রান্না করলেন। (Cooking in Space)
মহাকাশে নিত্যনতুন নজির গড়ে চলেছে চিন। এর মধ্যে নয়া আবিষ্কার হল, বিশেষ কিচেন টেকনোলজি। চিনের Shenzhou-21 মহাকাশযান মহাকাশে বিশেষ হট-এয়ার ওভেন পৌঁছে দিয়ে এসেছে। আর সেই প্রযুক্তির সাহায্যেই Shenzhou-20 এবং Shenzhou-21 মহাকাশযানের সওয়ারিরা রান্নাবান্না সারলেন। একেবারে সদ্য সদ্য রান্না করা, গরম খাবার খেলেন তাঁরা। (Science News)
মহাকাশে প্রথম বার কী রান্না করলেন চিনের মহাকাশচারীরা, তাও জানা গিয়েছে। তাঁদের মেনুতে ছিল চিকেন উইংস এবং স্টেক। ফলে এতদিন যে মহাকাশে শুধুমাত্র খাবার গরম করার সুবিধা পেতেন মহাকাশচারীরা, এবার তার চেয়ে বহু দূর এগিয়ে সেখানেই রান্না করে খাবার সুবিধা হাতের নাগালে এসে গেল। নতুন মাইলফলক গড়লেন তাঁরা।
China Astronaut Research and Training Centre-এর গবেষক শুয়ান ইয়ং রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “হাই টেম্পারেচার ক্য়াটালিস্টস এবং মাল্টি লেয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি আমরা। ধোঁয়ামুক্ত বেকিংয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছি। পৃথিবীর কক্ষপথের বিশেষ পরিবেশ অনুযায়ী, ওভেনটি তৈরি করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং ভরসাযোগ্য। ওভেনের যে কোনও অংশ নির্ভয়ে স্পর্শ করতে পারেন মহাকাশচারীরা। হাত পুড়বে না।”
অভিকর্ষ শক্তির বাইরে, মহাকাশে রান্নার উপযুক্ত ওভেন এই প্রথম আবিষ্কৃত হল, সেটিতে রান্নাও সারা হল মহাকাশেয ওই ওভেনের ডেপুটি চিফ সিস্টেম ডিজাইনার লু উইবো বলেন, “ওভেনের ভিতর রেঞ্জ হুড রেখেছি আমরা। অর্থাৎ হট এয়ার ওভেনে বিল্ট ইন পিউরিফিকেশনে ব্যবস্থা রয়েছে। মহাকাশে ব্যবহারের উপযুক্ত প্রথম ওভেন এটি।”
মহাকাশের ভাসমান অবস্থার কথা মাথায় রেখে রেসিডিউ কালেক্টরও বানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। রয়েছে হিটিং মেশ, বেকিং ট্রে, রোটেটিং বাস্কেট। ফলে রান্নার সময় খাবার শূন্যে ভাসবে না। ওভেনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখা হয়েছে। ফলে মহাকাশে খাবার রোস্ট ও বেক করতে পারবেন তাঁরা। পৃথিবী থেকে পাঠানো রেডি টু ইট, প্যাকেজড খাবার গরম করে খেতে হবে না। লু বলেন, “১৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রাখার অর্থ কক্ষপথে রান্না করে খাওয়ার সুযোগ দেওয়া। এতদিন শুধুমাত্র গরম করা যেত খাবার। এটা আসলেই রান্না। একেবারে মনপসন্দ খানা, নিজের স্বাদানুসারে খাওয়া যাবে।”
ওভেনে এমন প্রযুক্তি বসানো রয়েছে যে, ভুট্টা, চিকেন, কেক, সব খাবারের জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। বাদাম বেজে খেতে পারবেন মহাকাশচারীরা, গ্রিলও করতে পারবেন খাবার। এমনকি কেকও বানাতে পারবেন। অর্থাৎ জন্মদিন হোক বা বিশেষ দিন মহাকাশে সুস্বাদু খাবার সহযোগে তা পালন করতে পারবেন মহাকাশচারীরা। ফলে মহাশূন্যের বুকে তাঁদের জীবনের মানোনয়ন্নও ঘটবে। একই সঙ্গে, এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় চিনকে বেশ খানিকটা এগিয়ে দিল। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে মহাকাশচারীদের।