নয়াদিল্লি: মানবদেহের অবশিষ্টাংশ নিয়ে রওনা দেওয়া মহাকাশযান নিয়ে বিতর্ক ছিল গোড়াতেই। শেষ পর্যন্ত যাত্রা সফল হল না বেসরকারি সংস্থার Vulcan Centaur Rocket-এর Peregrine ল্যান্ডার. চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পরিবর্তে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে পারে সেটি। চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারিই আয়ু শেষ Peregrine ল্যান্ডারের। বিবৃতি প্রকাশ করে জানাল ওই মহাকাশযান প্রেরণকারী সংস্থা Astrobiotic Technology সংস্থা। (Crippled Peregrine Lunar Lander)
গত ৮ জানুয়ারি আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেয় Astrobiotic Technology সংস্থার মহাকাশযান Vulcan. সেটির উৎক্ষেপণ করে United Launch Alliance. আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা ছিল Peregrine ল্যান্ডারটির। মোট ১৫টি পেলোড নিয়ে রওনা দিয়েছিল সেটি, যার মধ্যে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, NASA-র যন্ত্রাংশের পাশাপাশি বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির কিছু পেলোড ছিল। Celestis, Elysium সংস্থার তরফে পাঠানো মানবদেহের অবশিষ্টাংশও বয়ে নিয়ে গিয়েছিল। কল্পবিজ্ঞানের লেখক আর্থার সি ক্লার্ক-সহ মোট ৪০ জনের অবশিষ্টাংশ ছিল একটি পেলোডে। পৃথক একটি পেলোডে ছিল আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট-সহ ২০০ জনের অবশিষ্টাংশ। (Vulcan Centaur Rocket)
কিন্তু মাহাকাশযানটি উৎক্ষেপণের সময়ই বিপত্তি দেখা দেয়। প্রথমে সৌর প্যানেলে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়, উৎক্ষেপণের পর আবার জ্বালানি চুঁইয়ে পড়ছে বলে জানা যায়। বুস্টার থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার পরই জ্বালানি চুঁইয়ে পড়তে থাকে বলে সামনে আসে। এর পরই পালকের মতো চাংদের মাটি ছোঁয়ার লক্ষ্যে ইতি পড়ে। তার পরও যদিও হাল ছাড়েননি বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কিছুতেই সুরাহা হয়নি। তার পরই Astrobotic-এর তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হল, Peregrine ল্যান্ডারটি পৃথিবীর অভিমুখে ফিরছে বলে।
শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় Astrobotic-এর তরফে লেখা হয়, ‘প্রপেল্যান্টে ছিদ্র তৈরি হওয়ায় আমাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে মহাকাশযানের গতিপথ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। শেষ বার পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, পৃথিবীর অভিমুখে এগিয়ে আসছে মহাকাশযানি। তবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে সেটিই আকাশেই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে’।
ঠিক কবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের প্রবেশ করবে Peregrine ল্যান্ডারটি, তা যদিও নিশ্চিত ভাবে সেই সময় জানাতে পারেনি Astrobotic. তবে রবিবার ল্যান্ডারটি পৃথিবী থেকে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার কিলোমিটার দূরে ছিল, চাঁদের কক্ষপথ থেকে কিছুটা দূরে। সেই নিরিখে বৃহস্পতিবার সেটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে পারে বলে অনুমান।
মহাজগৎকে ঘিরে বেসরকারি সংস্থাগুলির তৎপরতা বেড়েছে বিগত কয়েক বছর ধরেই। আমেরিকা থেকে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেওয়া প্রথম বেসরকারি ল্যান্ডার Peregrine. গোড়া থেকেই এই অভিযান নিয়ে বিতর্ক ছিল। মানবদেহের অবশিষ্টাংশ পাঠানোর সিদ্ধান্তে সমালোচনা শোনা যায় সব মহল থেকেই। বিষয়টি নিয়ে NASA এবং আমেরিকা সরকারকে চিঠিও লেখেন আমেরিকার আদি বাসিন্দাদের নিয়ে তৈরি Navajo Nation-এর প্রেসিডেন্ট, তাতে বলা হয়, চাঁদের সঙ্গে আধ্যাত্মিক যোগ রয়েছে বহু সংস্কৃতির। দেবতা হিসেবে চাঁদকে পুজো করেন অনেকে। সেই চাঁদের বুকে মানবদেহের অবশিষ্টাংশ পাঠিয়ে তার মাটিকে অপবিত্র করা হচ্ছে। সেই সময় NASA দাবি করে, এই অভিযানের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে ছিল না। কিন্তু মহাশূন্যে মানবদেহের অবশিষ্টাংশ পাঠানো নিয়ে ১৯৯৯ সালেই NASA-র সঙ্গে চুক্তি হয় Navajo Nation-এর, যার আওতায় এই ধরনের কোনও পরীক্ষা করতে গেলে আগেভাগে বিষয়টি নিয়ে সবপক্ষের অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন। তাই বিতর্কের মুখে পড়ে NASA দায় ঝেড়ে ফেলছে বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযান ব্যর্থ হওয়ায় NASA-র তরফে এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করা হবে বৃহস্পতিবার।