নয়াদিল্লি: একডাকে তাঁকে চেনে গোটা বিশ্ব। কেউ বলেন জিনিয়াস, কেউ বলেন খামখেয়ালি। সেই ইলন মাস্ক আবারও সাড়া ফেললেন। মানুষের মস্তিষ্কে ওয়্যারলেস চিপ (মস্তিষ্কের কৃত্রিম সঞ্চালন যন্ত্র) বসানোর কাজে সফল হল তাঁর সংস্থা Neuralink. মাস্ক নিজেই এর ঘোষণা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, 'গতকাল প্রথম বার মানবদেহে প্রতিস্থাপন কার্য সম্পন্ন করল Neuralink. ওই ব্যক্তি সেরে উঠছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে নিউরন থেকে সাড়াও মিলেছে'।


২০১৬ সালে Neurotechnology সংস্থা Neuralink-এর প্রতিষ্ঠা করেন মাস্ক। মানুষের মস্তিষ্ক এবং কম্পিউটারের মধ্যে প্রত্যক্ষ সংযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজে নামেন। মাস্ক জানান, মানুষের কার্যক্ষমতাকে সাধ্যাতীত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য তাঁর। পাশাপাশি, ALS বা পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত যাঁরা, তাঁদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন দিতেও এই পরিকল্পনা বলে জানান। সেই সময় মাস্ক জানান, মানুষ এবং যন্ত্রমেধার মধ্যে মিথোজীবী সম্পর্ক গড়ে তোলাই লক্ষ্য তাঁর, অর্থাৎ পরস্পরের মধ্যে সাহচর্য গড়ে তোলা।


সেই মতো কাজ শুরু করে মাস্কের সংস্থা Neuralink. জানানো হয়, মানুষের মস্তিষ্কে একটি চিপ বসানো হবে। একটির উপর আর একটি, পাঁচটি কয়েন জানালে যে ওজন এবং আকার পাওয়া যায়, সেই আকারের চিপ বসানো হবে মস্তিষ্কে, যা অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট জায়গায় বসানো হবে, কোনও তারের দ্বারা যা সংযুক্ত থাকবে না। সেই মতো, গত বছর আমেরিকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা পরীক্ষা এগিয়ে নিয়ে যেতে মাস্ককে অনুমোদন দেয়। মানুষের মস্তিষ্কে চিপ বসিয়ে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয় তাঁর সংস্থাকে।



সেই কাজে হাত দিয়ে সাফল্য এসেছে বলে মঙ্গলবার ঘোষণা করলেন মাস্ক। জানা গিয়েছে, মাস্কের সংস্থা Neuralink আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। সংস্থার মোট কর্মীর সংখ্যা ৪০০। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩৬ কোটি ৩০ লক্ষ ডলারের তহবিল গড়ে তুলেছে তারা। যদিও মস্তিষ্কে চিপ বসানোর দৌড়ে একা মাস্কই শামিল নন। অন্য সংস্থাগুলিও পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেছে। কেউ প্রকল্পের নাম দিয়েছেন ব্রেন-মেশিন, কেউ আবার ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস রিসার্চ।


গবেষণার কাজে গতি আনতে Synchron-এর সঙ্গেও হাত মেলান মাস্ক। Synchron-ও মস্তিষ্কে চিপ বসানোর কাজে লিপ্ত, তবে মানুষের মাথার খুলি কেটে তাদের তৈরি চিপ বসাতে হয় না। ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রথম বার এক রোগীর মস্তিষ্কে চিপ বসাতে সফল হয় Synchron. সেটি অস্ট্রেলিয়ার সংস্থা।


প্রযুক্তি সংস্থাগুলির এই ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে ইতিমধ্যেই আপত্তি উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু Neuralink-এর দাবি, দৃষ্টিশক্তি ফেরানো, মস্তিষ্ক, স্নায়ু এবং পেশির সংযুক্তিকরণ এবং সর্বোপরি কম্পিউটারের সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্ককে জুড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে বিজ্ঞানের। সেই কাজকে বাস্তবায়িত করে দেখাতে চায় তারা। এই মস্তিষ্ক সঞ্চালন যন্ত্র আসলে অত্য়াধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এক ধরনের মাইক্রোচিপ। সেটি ব্যবহার করে পক্ষাঘাত থেকে অন্ধত্ব দূর করা, শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী যাঁরা, কম্পিউটার এবং মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য মাস্কের সংস্থার। 


বাঁদরের মস্তিষ্কে ইমাইক্রোচিপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে আগেই। ওই মাইক্রোচিপ এমন ভাবে তৈরি করা হয় যে, মস্তিষ্কে উৎপন্ন সঙ্কেত ব্লুটুথের মাধ্যমে মাইক্রোচিপে প্রেরিত হবে।  পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সাফল্য পেয়েছেন সুইৎজারল্যান্ডের গবেষকরাও। নেদারল্যান্ডের এক ব্যক্তি দুর্ঘটনায় হাঁটার শক্তি হারিয়েছিলেন। মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। কিন্তু বিজ্ঞানীদের তৈরি করা যন্ত্রের সাহায্য ফের উঠে দাঁড়িয়েছেন তিনি, চলাফেরাও করতে পারছেন। 


এ ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল রোবটের সাহায্যে মস্তিষ্কে প্রতিস্থাপন করা হয় ওই যন্ত্রটিকে। তাতের মস্তিষ্কের সমস্ত সঙ্কেত রেকর্ড হয়ে যায়। কোনও রকম তার ছাড়াই তা ক্রমে সঞ্চারিত হয় ওই ব্যক্তির পায়ে এবং পায়ের পাতায়। অর্থাৎ মস্তিষ্ক হাঁটার কথা বললে, সেই অনুযায়ী ওই ব্যক্তির পা চলচে শুরু করবে।