নয়াদিল্লি: তীব্র দাবদাহ, আচমকা ভারী বৃষ্টি, বন্যা, গত কয়েক মাস ধরেই খামখেয়ালি আচরণ প্রকৃতির। এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা। আর সেই আবহেই আবারও উদ্বেগের খবর সামনে এল। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস এযাবৎকালীন উষ্ণতম মাস ছিল বলে জানা গেল। এল নিনো এবং মনুষ্যঘটিত জলবায়ু পরিবর্তনকেই এর জন্য দায়ী করেছেন গবেষকরা।  (Warmest April Ever)


ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জলবায়ু বিভাগ, কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (C3S) এই রিপোর্ট সামনে এনেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই নিয়ে টানা ১১ মাস রেকর্ড তাপমাত্রার সাক্ষী হল বিশ্ব। এ বছরের এপ্রিল মাসই এখনও পর্যন্ত উষ্ণতম এপ্রিল। ১৯৯১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তাপমাত্রার গড় হিসেবকে সামনে রাখলে, এ বথর এপ্রিল মাসে তাপমাত্রা ০.৬৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। এতদিন ২০১৬-র এপ্রিল মাসই উষ্ণতম মাস ছিল যদিও।  ১৯৯১-২০২০ সাল পর্যন্ত গড় তাপমাত্রার চেয়ে ২০১৬-র এপ্রিলের তাপমাত্রা ০.১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। (European Climate Agency)


C3S-এর ডিরেক্টর কার্লো বুয়োন্তেম্পো বলেন, "বছরের শুরুতেই এল নিনোর প্রকোপ দেখা দেয়। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এই মুহূর্তে ফের স্বাভাবিক হওয়ার পথে। কিন্তু এল নিনো আসে যায়। কিন্তু গ্রিন হাউস গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধির জেরে সাগর-মহাসাগর এবং বায়ুমণ্ডলে  যে বাড়তি শক্তি আটকে রয়েছে, তার প্রভাবেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে।"


আরও পড়ুন: Origin of Cancer: ক্যান্সার শুনলেই হাড় হিম হয়ে যায়, রোগের এমন নামকরণ কেন জানেন?


২০২৩ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত, গত ১২ মাসে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ছিল ০.৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ১৯৯১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত গড় তাপমাত্রার চেয়ে যা অনেকটাই বেশি। আবার ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের হিসেব ধরলে, গড় তাপমাত্রা ১.৬১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।


C3S জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এই প্রথম বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা টানা একবছর ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা লঙ্ঘন করল। এমনটা হতে পারে বলে প্যারিস চুক্তিতে আগেই উল্লেখ ছিল। দীর্ঘমেয়াদি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল সেই সময়। জলবায়ু পরিবর্তনের চরম প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে হলে, পৃথিবীর সব দেশগুলিকে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি রুখতে এগিয়ে আসতে হবে বলে মত পরিবেশবিদদের। 


গবেষকরা জানিয়েছেন, ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ইতিমধ্যেই ১.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। অত্যধিক গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমনকেই এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেনেক হার বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত গতিতে। খরা থেকে দাবানল এবং বন্য়া, সব কিছুর জন্যই এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন গবেষকরা। 


সম্প্রচি জার্মানির পটসড্যাম ইনস্টিটিউট অফ ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ জানায়, ২০৪৯ সাল পর্যন্ত এমন চলতে থাকলে, প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি হবে। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলি, এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে যাদের তেমন ভূমিকাই নেই, তারা এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন বিশেষজ্ঞ মহলের।


গত ১৭৪ বছরের রেকর্ড দেখলে, এখনও পর্যন্ত ২০২৩ সালই সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। ওই বছর বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ছিল ১.৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ফলে আবহাওয়াও চরম থেকে চরমতম হয়ে উঠছে। তাপপ্রবাহের জেরে ফিলিপিন্স,ভারতের মতো দেশে তাপমাত্রা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। তাপপ্রবাহের জেরে বন্ধ রাখতে হচ্ছে স্কুলও। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মায়ানমারেও একই পরিস্থিতি। গত ৭৫ বছরে সর্বাধিক বৃষ্টি হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে। গত ১৩ মাস ধরে সমুদ্রের উষ্ণতাও রেকর্ড হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে আবার লা নিনার পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর। ফলে অতিবৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। 


উচ্চ মাধ্যমিকের ফল দেখতে রোল নম্বর দিয়ে সার্চ করুন