নয়াদিল্লি: ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল আগেই। তার পর কয়েক মাসই কেটেছে মাত্র। মহাকাশ গবেষণায় এবার অসাধ্যসাধন করল জাপান। পরিবেশ বান্ধব, কাঠের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করে সাড়া ফেলল তারা। এই প্রথম কাঠ দিয়ে তৈরি করা হল আস্ত একটি কৃত্রিম উপগ্রহ। আগামী সপ্তাহেই জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা JAXA-র হাতে কাঠের তৈরি ওই কৃত্রিম উপগ্রহ তুলে দেওয়া হবে। এর পর, এবছরই সেটি পাঠানো হবে মহাকাশে। (First Wooden Satellite)
মহাকাশ গবেষণার জগতে একাধিক বার কাঠের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরির কথা উঠে এসেছে। সেই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করে দেখাল জাপান। এ বছরের গোড়ায় কাঠ দিয়ে তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহের মডেলের ছবি প্রকাশ করে তারা, যার নাম রাখা হয়েছে LignoSat Probe. মঙ্গলবার সেটির পূর্ণাঙ্গ রূপ তুলে ধরা হল সকলের সামনে। কিয়োটো ইউনিভার্সিটির গবেষকরা কাঠ দিয়ে কৃত্রিম উপগ্রহটি তৈরি করেছেন, তাতে সাহায্য করেছে সুমিতোমো ফরেস্ট্রি। ২৫ মে সাংবাদিক বৈঠক করে কাঠের কৃত্রিম উপগ্রহটি তুলে ধরা হয় সকলের সামনে। (Science News)
সাংবাদিক বৈঠকে কিয়োটো ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী তথা অধ্যাপক তাকাও দোই বলেন, "ধাতব নয়, এমন কৃত্রিম উপগ্রহের ব্য়বহার বাড়ানো উচিত।" তিনি জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহেই JAXA-র হাতে তুলে দেওয়া হবে কাঠের কৃত্রিম উপগ্রহটিকে। এর পর, আমেরিকার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে, ইলন মাস্কের সংস্থা SpaceX রকেটে চাপিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে সেটিকে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন: Moon During Day: মাঝে মধ্যে দিনেবেলাতেও আকাশে চাঁদের দেখা মেলে, কেন জানেন কি?
আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে এর পর মহাশূন্যে বের করা হবে কাঠের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহটিকে। সেটির শক্তি এবং স্থায়িত্ব পরীক্ষা করে দেখা হবে। সুমিতোমো ফরেস্ট্রির মুখপাত্র জানিয়েছেন, কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে সরাসরি পৃথিবীতে বিজ্ঞানীদের হাতে তথ্য় এসে পৌঁছবে। কাঠের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহটি মহাশূন্যে টিকে থাকতে পারে কিনা, তারমাত্রার হেরফেরে তার উপর কী প্রভাব পড়ে, খতিয়ে দেখবেন বিজ্ঞানীরা।
মহাকাশ থেকে ছিটকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করলে সব কৃত্রিম উপগ্রহই পুড়ে যায়, যা থেকে অ্যালুমিনিয়ামের কণা ছড়িয়ে যায় সর্বত্র। বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরে বহু বছর ভেসে থাকে সেগুলি, যা পৃথিবীর পরিবেশকেও প্রভাবিত করে। সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেই কাঠের কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরির কাজে হাত দেয় জাপান। বিভিন্ন ধরনের কাঠ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলে। শেষ পর্যন্ত হিমচাঁপা গাছের কাঠ পরীক্ষায় উতরে যায়। ওই কাছ সহজে ক্ষয়ে যায় না, ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, তার ভরেরও কোনও পরিবর্তন হয় না বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনেও ওই হিমচাঁপা কাঠ পাঠানো হয়। সেখানে এক বছর ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে। ওই কাঠ আবার পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হয়। সামান্য ঘর্ষণ ছাড়া সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এর পরই কাজে হাত দেন বিজ্ঞানীরা।
সেপ্টেম্বরে কাঠের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহটির উৎক্ষেপণ হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে মঙ্গলবারই যৌথ ভাবে আরও একটি অত্যাধুনিক কৃত্রিম উপগ্রহের উৎক্ষেপণ করেছে JAXA এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। জলবায়ু পরিবর্তনকে ঠেকাতে কীভাবে মেঘকে কাজে লাগানো যায়,EarthCare নামের কৃত্রিম উপগ্রহ সেই নিয়ে গবেষণা করবে। আগামী তিন বছর পৃথিবীর ২৫০ মাইল উপরে অবস্থান করবে সেটি।