নয়াদিল্লি: মহাশূন্যে প্রাণের খোঁজ চলছে একদিকে। আবার পৃথিবীর বিকল্প বাসস্থান গড়ে তোলার প্রচেষ্টাও। প্রায় প্রত্যেক বছরই একাধিক দেশ মহাশূন্যে রকেট পাঠিয়ে চলেছে। কোটি কোটি টাকার এই অভিযানের কোনওটি সফল হয়, কোনওটি আবার ব্যর্থ, কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগিত নিয়ে উৎসাহ, উন্মাদনা এবং সর্বোপরি বিজ্ঞানের প্রতি আস্থা, সব ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। কিন্তু এেত মহাশূন্যের আলো-আঁধারি জগতে প্রভাব পড়ছে মারাত্মক। কারণ চাঁদ থেকে মঙ্গল, মোটামুটি ভাবে যেখানে যেখানো পৌঁছনো গিয়েছে এখনও পর্যন্ত, সর্বত্রই আবর্জনার পাহাড় জমছে। (Science News)


আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষ থেকে বিজ্ঞানীদের ব্যবহার করা টুথব্রাশ, তোয়ালে, বাসনপত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জামও রয়েছে ওই আবর্জনার স্তূপে। শুধু তাই নয়, মহাকাশযাত্রীদের বিষ্ঠাভর্তি ৯৬টি প্লাস্টিকের ব্যাগ, প্রস্রাব এবং বমির আলাগা ব্যাগও উপচে পড়ছে চাঁদের বুকে।  শুধুমাত্র চাঁদের বুকেই সবমিলিয়ে ২০০ টন আবর্জনা জমা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। (Space Debris)


এখনও পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান সামনে এসেছে, সেই অনুযায়ী, চাঁদের বুকে অবতরণ করতে গিয়ে কমপক্ষে ৫০টি মহাকাশযান ভেঙে পড়েছে। তার ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে যেমন, গল্ফ বল, জুতো, পালকও রয়েছে পড়ে। এর পাশাপাশি মহাশূন্যেও মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষ ঘুরে ভেসে বেড়াচ্ছে টুকরোর আকারে। এর প্রভাব পৃথিবীর উপরও পড়তে পারে বলে মত বিজ্ঞানীদের। কারণ পৃথিবীর কক্ষপথেও ওই ধ্বংসাবশেষ ঢুকে বড়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। 


আরও পড়ুন:  Science News: তারাদের দেশে গ্রহের সংখ্যা ঠিক কত, খোলসা করলেন বিজ্ঞানীরা


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর কক্ষপথে যে সমস্ত ধ্বংসাবশেষ ভেসে বেড়াচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে বিকল হয়ে যাওয়া মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষ, মহাকাশচারীদের ব্যবহৃত এবং ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র, টুকরো টুকরো বস্তু। ঘণ্টায় ১৫ হাজার কিলোমিটার গতিবেগে ছুটে চলেছে সেগুলি। ব্রিটেনের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্রিস ইম্পে জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি পৃথিবীর জন্যও যথেষ্ট উদ্বেগের।


জানা গিয়েছে, যে সমস্ত ধ্বংসাবশেষ ভেসে বেড়াচ্ছে মহাশূন্যে, এর মধ্যে ২৩ হাজার টুকরো টুকরো আবর্জনার ব্যাস ১০ সেন্টিমিটারের বেশি। এক মিলিমিটারের বেশি ব্যাসের আবর্জনার টুকরো রয়েছে প্রায় ১০ কোটি। সেগুলি মহাশূন্যে ঘুরতে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহগুলির সঙ্গে ধাক্কাও খেয়ে চলেছে অহরহ। অথচ আবর্জনা পরিষ্কারে উদ্য়োগী হতে দেখা যাচ্ছে না কাউকে, মত ইম্পের। কোন উপায়ে এর সমাধান সূত্র বের করা সম্ভব, তা এখনও অস্পষ্ট। এ ব্যাপারে কড়া বিধিনিষেধ চালু করার দাবিও তুলছেন কেউ কেউ। 


যদিও সম্প্রতি এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে আমেরিকার গবেষণা সংস্থা NASA. মহাকাশে সাফাই অভিযান চালাতে তৎপর হয়েছে তারা। একটি বেসরকারি সংস্থাকে সেই মর্মে বরাতও দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই।  মহাকাশ অভিযানের যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক স্টার্টআপ সংস্থা, TransAstra-কে আপাতত ৮ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার মূল্যের বরাত দেওয়া হয়েছে, যার আওতায় ওই সংস্থা একটি ব্যাগ তৈরি করবে। পৃথিবীর কক্ষপথে গিয়ে ওই ব্যাগটি স্ফীত আকার ধারণ করবে। মহাকাশে ভেসে থাকা আবর্জনা, পাথরের টুকরো, ধুলো, ময়লা ভিতরে শুষে নেবে ওই ব্যাগ।


TransAstra নামের ওই সংস্থা আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র কাছ থেকে এই নিয়ে দ্বিতীয় বরাত পেল। এর আগে, ২০২১ সালে তাদের গ্রহাণু এবং মহাজাগতিক পাথরের টুকরো সংগ্রহের বরাত দেওয়া হয়েছিল। বরাত লাভের পর, কাজে হাত দিয়ে TransAstra নামের ওই সংস্থা বুঝতে পারে যে, গ্রহাণু থেকে নুড়ি-পাথরের আকারের টুকরো যেমন ভেসে বেড়ায় মহাকাশে, মহাজাগতিক অন্যে আবর্জনাও আকারে নুড়ি-পাথরের মতো, কখনও আরও ক্ষুদ্র। মহাকাশে সাফাই অভিযান চালানোর জন্য ওই প্রযুক্তির সার্বিক ব্যবহারে আরও কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। তবে সাফাই অভিযান যত দ্রুত শুরু করা যায়, ততই মঙ্গল বলে মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।