কলকাতা: তেতে উঠছে বায়ুমণ্ডল, ভোল পাল্টাচ্ছে মহাসাগরের স্রোত। অল্প কথায় বলতে হলে, পাল্টে যাচ্ছে জলবায়ু। তার জেরেই ভারতের পশ্চিম উপকূল (West Coast Of India) অর্থাৎ আরব সাগরের পূর্ব (East Arabian Sea) দিকে প্রবল ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের (Intense Tropical Cyclone) সংখ্যা বাড়ছে, মনে করেন আবহাওয়া (Climate Change) বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ। কিন্তু এসবে সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসন, কার কী-ই বা এসে যায়? কতটুকু টনক নড়ে তাদের?


কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
মার্চ থেকে জুন, অর্থাৎ দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যখন বর্ষা নিয়ে আসে, সাধারণত তখনই আরব সাগরে এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় দানা বাঁধার প্রবণতা তৈরি হয়। বছরের আরও একটি সময়ে পূর্ব আরব সাগর অঞ্চলে একই প্রবণতা দেখা যায়। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্তও প্রবল ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেখানে। Cochin University of Science and Technology-র ডিপার্টমেন্ট অফ অ্য়াটমসফেরিক সায়েন্সের অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসর এস অভিলাষের মতে, ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সে বছর পাঁচটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল আরব সাগরে। সাধারণ ভাবে ওই সংখ্যা ৩-র বেশি হওয়ার কথা নয়। অভিলাষের কথায়, '২০১৯ সালে কিন্তু ইন্ডিয়ান ওশেন ডায়পোলের ধনাত্মক বা পজিটিভ পর্যায় চলছিল। অর্থাৎ এটা বলা যায় যে অনুকূল প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে, আরব সাগরের তাপমাত্রা যত বাড়বে, তত ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ও সংখ্যা বেশি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।' এই সংক্রান্ত তাঁদের একটি গবেষণাপত্রও 'সায়েন্টিফিক রিপোর্টস' জার্নালে প্রকাশ হয়েছে। 


ইন্ডিয়ান ওশেন ডায়পোল কী?
ইন্ডিয়ান ওশেন ডায়পোল অনেকটা এল নিনোর মতো। এখানে মহাসাগরের একাংশ, অন্য অংশের তুলনায় উষ্ণতর হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন,  ইন্ডিয়ান ওশেন ডায়পোলের যখন ধনাত্মক পর্যায় চলে, তখন সমুদ্রের উপরিতলের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, ভারত মহাসাগরের পশ্চিমাংশে অনেক বেশি বৃষ্টিও হয়। একই ধরনের সঙ্গতি বজায় থাকে ভারত মহাসাগরের পূর্বাংশে। Cochin University of Science and Technology-র ডিপার্টমেন্ট অফ অ্য়াটমসফেরিক সায়েন্সের অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসর এস অভিলাষের মতে, প্রকৃতির নিয়মে নয়, মানুষের কারণে যে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তার জেরেই বর্ষার পর আরব সাগরের পূর্বাংশে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়ছে। ফলে ভারতের পশ্চিম উপকূল আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। কিন্তু গবেষকদের সতর্কীকরণ সত্ত্বেও নীতি নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কতটা টনক নড়বে? সাধারণ মানুষই বা কবে বুঝবেন, প্রকৃতিকে যথেচ্ছ ব্যবহার করা যায় না? উত্তর নেই। শুধু আছড়ে পড়ে একটার পর একটা বিপর্যয়।


 


আরও পড়ুন:ময়নাগুড়িতে তিস্তার চর থেকে উদ্ধার ৮ দেহ, আটকে আরও কয়েকটি