নয়াদিল্লি: চাঁদের মাটিতে ফের রোমহর্ষক অভিযান। তাই মুখিয়ে ছিলেন সকলে। কিন্তু চাঁদের মাটিতে বোধহয় আছড়ে পড়ল জাপানের চন্দ্রযান। হাকুতো ২ অভিযানের আওতায় পালকের মতো চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা ছিল ল্যান্ডার Resilience. শুধু চাঁদের মাটি ছোঁয়াই নয়, দুর্গম উত্তর মেরুর Sea of Cold বা ‘শীতল সমুদ্রে’র বুকে নেমে ইতিহাস রচনা করার কথা ছিল। ভারতীয় সময় অনুযায়ী, বৃহস্পতি-শুক্রবার রাত ১২টা বেজে ৪৭ মিনিট সময়টি নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সকলকে নিরাশ করল জাপানের Resilience. সেই সঙ্গে পৃথিবী থেকে যে বিশেষ Moonhouse নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাও গুঁড়িয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোনও খবর পাওয়া যায়নি ল্যান্ডারটির। তবে গতিবেগ কমানো যায়নি বলে সেটি ভেঙে পড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এ নিয়ে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিবৃতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ispace.(Hakuto-R Mission 2)

Resilience জাপানের বেসরকারি সংস্থা ispace-এর (TOKYO: 9348) চন্দ্রযান। আমেরিকার পর এই প্রথম অন্য কোনও দেশের বেসরকারি সংস্থার চন্দ্রযান পৃথিবীর উপগ্রহের মাটি ছুঁতে যাচ্ছিল। দু’বছর আগেও চাঁদের মাটি ছোঁয়ার চেষ্টা করে ispace. কিন্তু নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামার পরিবর্তে সেখানে আছড়ে পড়ে তাদের চন্দ্রযান। এবার তাই গোড়া থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। কিছুতেই গতি কমানো যাচ্ছিল না। মাটি ছোঁয়ার আগের মুহূর্তেও গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮৭ কিলোমিটার, মাটি থেকে দূরত্ব ছিল ২২৩ মিটার। এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে মাটি ছোঁয়ার কথা ছিল, আর তাতেই বিপত্তি ঘটে বলে ধারণা। (Resilience Moon Landing)

জাপানের এই চন্দ্রযানটির ল্যান্ডার চাঁদের Mare Frigoris সমতলে নামতে যাচ্ছিল। এটি চাঁদের উত্তর মেরুতে অবস্থিত ৯০০ কিলোমিটার আয়তনের সমতল এলাকা। চার চাকার Tenacious রোভার নিয়ে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা ছিল Resilience-এর. Ispace-এর ভর্তুকিপ্রাপ্ত লাক্সেমবার্গের একটি সংস্থা তার রোভারটি তৈরি করেছে। পেলোডটি তৈরি করতে খরচ পড়েছে প্রায় ১৬ মিলিয়ন ডলার। যন্ত্রপাতি তৈরির দায়িত্ব ছিল জাপানেরই কিছু সংস্থা এবং তাইওয়ানের একটি ইউনিভার্সিটি।

Resilience ল্য়ান্ডারটির উচ্চতা ২.৩ মিটার। সব ঠিকলে ১৪ দিন চাঁদের উত্তর মেরুতে গবেষণা চালাত। ১৪ দিন পর চাঁদের বুকে রাত নামবে, তার আগেই যা করার করে নেওয়া হেব বলে ঠিক ছিল।  চাঁদের মাটি থেকে নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি, ছবি তোলার কথা ছিল সেটি। ওই নমুনা ভবিষ্যতে সংগ্রহ করে আনার লক্ষ্য ছিল। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র সঙ্গে সেই মর্মে চুক্তিও হয় ispace-এর।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে দুর্গম স্থান বলেই ধরা হয়। সূর্যের আলো পৌঁছয় না, ফলে অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। সমতল এলাকাতেই চন্দ্রযানটিকে নামানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ‘শীতল সমুদ্রে’ গুটিকয়েক পাথরের চাঁই ছাড়া কিছু নেই। একসময় ওই এলাকা দিয়ে লাভা বয়ে যেত বলে জানা যায়। 

Resilience ল্য়ান্ডারটিকে অত্যন্ত যত্নসহকারে তৈরি করা হয়েছে। আবার রোভারটির উপর লাল রংয়ের একটি ছোট বাড়ি, যেমনটি দেখা যায় সুইডেনে। সেটির নাম রাখা হয় Moonhouse. চাঁদের মাটিতে নামানোর কথা ছিল সেটিকে, মানবসভ্যতার সাফল্যের প্রতীক হিসেবে।

বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য এই চন্দ্রাভিযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। চলতি বছরের শেষেই Amazon কর্তা জেফ বেজোসের সংস্থা Blue Origin চাঁদে মহাকাশযান পাঠাতে চলেছে। এর পর Astrobotic Technologies-ও চন্দ্রাভিযানে যাবে। এর আগে. গত বছর আমেরিকার সংস্থা Intuitive Machines-এর Athena ল্যান্ডার চাঁদের মাটি ছোঁয়। কিন্তু সেটি একদিকে কাত হয়ে পড়ে চাঁদের মাটিতে। কিন্তু মনে হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত ইতিহাস রচনা করা হল না Resilience-এর।