নয়াদিল্লি: ঘুম ভাঙানোর যাবতীয় চেষ্টা করলেও, এখনও পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। তবুও চন্দ্রপৃষ্ঠে ল্যান্ডার 'বিক্রম' এবং রোভার 'প্রজ্ঞান'কে জাগানোর চেষ্টা ছাড়ছেন না ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। সেই আবহেই সংবাদমাধ্যমে মুখ খুললেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র প্রধান এস সোমনাথ। জানালেন, চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের সমস্ত বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামই ছিল। এখনও পর্যন্ত তা থেকে যা তথ্য উঠেছে, তাতে সন্তুষ্ট বিজ্ঞানীরা।
চন্দ্রযান-৩ অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন সোমনাথ। চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযান থেকে প্রাপ্ত সমস্ত তথ্যই মজুত করে রাখা হয়েছে। সেই সব খতিয়ে দেখতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। এর পাশাপাশি চন্দ্রযান-১ মহাকাশযানও সক্রিয় রয়েছে। সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্যও প্রকাশিত হয়ে চলেছে এখনও। আপাতত সেগুলি খতিয়ে দেখাই প্রধান কাজ বিজ্ঞানীদের।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে চন্দ্রযান-৩ অভিযানের খুঁটিনাটি নিয়ে মুখ খোলেন সোমনাথ। তিনি জানান, চন্দ্রযান-২ অভিযান, তাঁদের বড় শিক্ষা দিয়েছিল। ওই মহাকাশযান ভেঙে পড়ার নেপথ্য কারণ খতিয়ে দেখতে, ভুলত্রুটিগুলি পর্যালোচনা করে দেখতে, কঠোর পরিশ্রম করেন তাঁরা। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই চন্দ্রযান-২ অভিযানের কাজে হাত দেন।
ISRO প্রধান সোমনাথ জানিয়েছেন, চন্দ্রযান-২ মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করে এনে গবেষণা করা সম্ভব ছিল না তাঁদের পক্ষে। তাই পৃথিবীতে বসেই ব্যর্থকার কারণ অনুসন্ধান করতে নেমে পড়েন। সেই যাত্রা মোটেই সহজসাধ্য ছিল না। তবে সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় ভুল-ত্রুটিগুলি বোঝা সম্ভব হয়। এক নয়, একাধিক কারণ ছিল চন্দ্রযান-২ অভিযানের ব্যর্থতার নেপথ্যে। পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল সবক'টি।
চন্দ্রযান-২ মহাকাশযানকে চাঁদে না পাঠানো হলে, পৃথিবীতে বসে ভুল-ত্রুটি খুঁজে বের করে, সুরাহা অসম্ভব ছিল বলে জানিয়েছেন সোমনাথ। তিনি জানিয়েছেন, ISRO-র হাতে এই মুহূর্তে প্রচুর তথ্য রয়েছে। চন্দ্রযান-২ অভিযানে যে যে সমস্যা ছিল, তার একাধিক সুরাহাও বের করতে সক্ষম হয়েছে তাঁরা। কোথায় আরও উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে, তাও অনুধাবন করা সম্ভব হয় সব তথ্য খতিয়ে দেখে।
সোমনাথ জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে চাঁদের মাটিকে পৃথিবীবাসীর উপযুক্ত করে তোলা সম্ভব কিনা, সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতেই বার বার চাঁদে গমন। তার জন্য চাঁদের পা রেখে, ফিরে আসাও জরুরি। আবার এখান থেকে জিনিসপত্রও নিয়ে যেতে হবে। শুধু চাঁদের বুকে পা ফেললেই হবে না। মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে নিজেদের দুর্বল ভাবা, অর্থক্ষয়ের কথা ভেবে পিছিয়ে আসলে হবে না, বরং জ্ঞান সংগ্রহের জন্য এগিয়ে যেতে হবে, এমনটাই জানালেন সোমনাথ। এ প্রসঙ্গে আমেরিকা এবং রাশিয়ার উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।
চন্দ্রযান-৩ অভিযানের আওতায় চাঁদের মাটিতে সফল ভাবেই অবতরণ করেছে ল্যান্ডার 'বিক্রম' এবং রোভার 'প্রজ্ঞান'। কিন্তু পৃথিবীর হিসেবে চাঁদের বুকে ১৪ দিনের নিশিযাপনের পর থেকে এখনও পর্যন্ত তাদের জাগিয়ে তোলা সম্ভব হয়নি। তাদের কাছ থেকে কোনও সিগনাল মেলেনি বলে জানা যাচ্ছে। তবে হাল ছাড়ছেন না বিজ্ঞানীরা।