নয়াদিল্লি: দীর্ঘ চার মাসের যাত্রাপথ। অবশেষে লক্ষ্যে পৌঁছতে চলেছে ভারতের প্রথম সৌরযান Aditya-L1. শনিবার ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্ট (L1)-এর চূড়ান্ত কক্ষপথে পৌঁছনোর কথা তার। বিকেল ৪টে নাগাদ ল্যারগাঞ্জ পয়েন্টের 'হেলো অরবিটে' পৌঁছবে Aditya-L1, যা আসলে ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্ট L1, L2 এবং L3-কে ঘিরে থাকা পর্যায়ক্রমিক, ত্রিমাত্রিক কক্ষপথ।

  Aditya-L1 সৌরযানকে চূড়ান্ত কক্ষপথে পৌঁছে দিতে আজই শেষ ধাক্কা দেওয়া হবে ISRO-র তরফে। (Aditya-L1 Mission)


ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র প্রধান এস সোমনাথ জানিয়েছেন, ৬ জানুয়ারি বিকেল ৪টে নাগাদ L1 পয়েন্টে পৌঁছবে Aditya-L1.  সেখানে ভারতীয় সৌরযানটিকে থিতু করার প্রক্রিয়া চলছে। ওই অবস্থান থেকে সরাসরি সূর্যের উপর নজরদারি চালাতে পারবে Aditya-L1. কোনও রকম বাধা-বিপত্তি আসবে না তার সামনে। অন্য কোনও গ্রহ বা উপগ্রহ এবং তাদের ছায়া নজরদারিতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। (ISRO News)


ISRO-র তরফে জানানো হয়েছে, চূড়ান্ত লক্ষ্যে Aditya-L1 কে পৌঁছে দিতে হবে। নইলে যাত্রা থামবে না ভারতীয় সৌরযানের। সূর্যের অভিমুখে এগিয়ে যেতে থাকবে সেটি। তাই কোথাও কোনও বিচ্যুতি যাতে না হয়, মহাকাশের আবহাওয়ার উপরও নজর রাখছে ISRO. সৌরঝড় বা তার আঁচ যাতে সৌরযানের উপর না পড়ে, তার উপর নজর রাখা হচ্ছে।  সোমনাথ জানিয়েছেন, সৌরঝড় নিয়ে আগাম সতর্কতাও পৃথিবীতে পৌঁছে দিতে পারবে Aditya-L1. ফলে মহাকাশে বিরাজমান কৃত্রিম উপগ্রহগুলিকে রক্ষা করা সম্ভব।


আরও পড়ুন: NASA On Asteroid:'চিন্তা নেই', কেন পৃথিবীর মানুষকে হঠাৎ আশ্বাসবাণী নাসা-র?


সোমনাথ জানিয়েছেন, মহাশূন্যে ভারতের মোট সম্পদের মূল্য প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫০টি সক্রিয় কৃত্রিম উপগ্রহও রয়েছে। সূর্যের গ্রাস থেকে যেনতেন প্রকারে সেগুলিকে রক্ষা করতে হবে। Aditya-L1 সাতটি পেলোড নিয়ে রওনা দিয়েছে। সূর্যের আলোকমণ্ডল, বহিরাবরণকে পর্যবেক্ষণ করা হবে, চালানো হবে পরীক্ষানিরাক্ষা। সূর্য থেকে সৌরঝড়ের মাধ্যমে বাইরে ঠিকরে বেরনো অণু পরীক্ষা করে দেখবে, সৌরজগতের উপর তার কী প্রভাব, দেখা হবে খতিয়ে। 


 গত ২ সেপ্টেম্বর উৎক্ষেপণ হয় ভারতের প্রথম Aditya-L1 সৌরযানের। ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে বানানো, Aditya-L1 সৌরযানের ওজন ১৫০০ কেজি। পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করে সূর্যের উপর নজরদারি চালাবে। চার মাস পর ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্ট (L1)-এ পৌঁছচ্ছে সেটি। মহাশূন্যে সূর্য এবং পৃথিবীর মতো দুই বস্তুর পারস্পরিক আকর্ষণ এবং বিকির্ষণের ফলে মাঝে যে স্থিতিশীল অঞ্চল গড়ে ওঠে, তাকে বলে ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্ট। এই ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্টকে মহাকাশযানের পার্কিং স্পটও বলা হয়। কারণ কম জ্বালানি খরচ করে, সেখান থেকে মহাজাগতিক কর্মকাণ্ডের উপর নির্বিঘ্নে নজরদারি চালানো যায়। 


এমন পাঁচটি ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্টের হদিশ পাওয়া গিয়েছে, যার মধ্যে মাত্র দু’টি স্থিতিশীল, তার মধ্যে ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্ট (L1)-এ সৌরযান Aditya-L1 অবস্থান করবে।  ওই ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্ট (L1)-এ প্রবেশ করার তখনই সম্ভব হবে, যখন ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্ট (L1)-কে ঘিরে থাকা ‘হেলো অরবিট’ পার করতে সফল হবে ভারতের সৌরযান। এই ‘হেলো অরবিট’ আসলে ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্ট L1, L2 এবং L3-কে ঘিরে থাকা পর্যায়ক্রমিক, ত্রিমাত্রিক কক্ষপথ। একটি বিন্দুকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে বলে ঠাহর হয়। দূর থেকে জ্যোতির্বলয়ের মতো দেখায়। এই কক্ষপথ স্থিতিশীল হয়। পৃথিবী, চাঁদ এবং সূর্যের মহাকর্ষীয় পদ্ধতি অনুসরণ করে এগোতে পারে মহাকাশযান। মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে কৃত্রিম উপগ্রহ এবং মহাকাশযানগুলিকে ‘হেলো অরবিট’-এ প্রবেশ করানো হয়। এখানে মহাকাশযান স্থিতিশীল থাকে। অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয় না। ধাক্কা লাগে না অন্য মহাজাগতিক বস্তুর সঙ্গে। কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট, জেমস ওয়েবের মতো স্পেস টেলিস্কোপের অভিযানে এই ‘হেলো অরবিট’-এর ব্যবহার দেখা গিয়েছে আগেও।