নয়াদিল্লি: পালকের মতো চাঁদের মাটি স্পর্শ করে ইতিহাস রচনা করেছে ভারতের চন্দ্রযান-৩। তার পর এক বছরও কাটেনি। চাঁদের উদ্দেশে পরবর্তী অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। এবার পৃথিবীর উপগ্রহে চন্দ্রযান-৪ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO. ২০২৮ সাল নাগাদ চন্দ্রযান-৪ মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ করতে পারে তারা। (Chandrayaan-4 Mission)


ISRO-র স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (SAC)-এর দায়িত্ব প্রাপ্ত নীলেশ দেসাই এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, পরবর্তী চন্দ্রাভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ISRO. ২০২৮ সাল নাগাদ চন্দ্রযান-৪ মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ হবে। ওই অভিযানের আর এক নাম LUPEX মিশন। (ISRO Next Moon Mission)


ISRO-র তরফে জানানো হয়েছে, চন্দ্রযান-৩ চাঁদের বুকে যে কাজ শুরু করেছিল, সেই কাজ সম্পূর্ণ করবে চন্দ্রযান-৪। পাশাপাশি, আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ন্যস্ত তার উপর। চাঁদের মাটি থেকে পাথর এবং নমুনা সংগ্রহ করে আনবে চন্দ্রযান-৪। সেই কাজে সফল হলে চাঁদের মাটি থেকে নমুনা সংগ্রহকারী চতুর্থ দেশ হিসেবে ইতিহাসেক পাতায় নাম উঠবে ভারতের। 


আরও পড়ুন: Prashanth Balakrishnan Nair: সংসার চালাতে কুয়েতে পড়েছিলেন বাবা, ছেলে ‘গগনযান’ অভিযানের নায়ক গ্রুপ ক্যাপ্টেন নায়ার


নমুনা সংগ্রহ করতেও চাঁদের দক্ষিণ মেরুতেই অবতরণ করানো হবে চন্দ্রযান-৪। সেখান থেকে পাথর, মাটির নমুনা সংগ্র করবে ভারতীয় মহাকাশযানটি। সেগুলি আবার পৃথিবীতে ফেরতও আনবে, যা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদের মাটিতে জলের অণু রয়েছে কি না, আর কী কী খনিজ রয়েছে, তা আদৌ ভবিষ্যতে উপনিবেশ গড়ে তোলার উপযুক্ত কি না, পরীক্ষা করে দেখা হবে।


চন্দ্রযান-৪ অভিযান আরও একটি দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তার হাত ধরেই চাঁদের মাটিতে ৩৫০ কেজি ওজনের একটি রোভার নামানো হবে, যা অল্প সময়ের মধ্যে অনেকটা দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম। এখনও পর্যন্ত চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পর বৃহদাকার গহ্বরগুলিতে নামতে পারেনি কোনও দেশ। ওই রোভারকে দিয়ে গহ্বরের উপরিভাগে অনুসন্ধান চালানো হবে। প্রয়োজনে গহ্বরের কেন্দ্রস্থলেও উঁকিঝুঁকি দেবে সে। 


ভারী ওজনের মহাকাশযান উৎক্ষেপণের জন্য তৈরি GSLV Mk III ওরফে LVM3 উৎক্ষেপণযানকে চন্দ্রযান-৪ অভিযানে ব্যবহার করা হবে। কারণ চাঁদের বুক থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আবার পৃথিবীতে সেগুলি নিরাপদে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যও রয়েছে। তাই দুই ধাপে উৎক্ষেপণ হবে বলে জানা গিয়েছে। 


চন্দ্রযান-৩ অভিযানের মতো একই পদ্ধতিতে চাঁদের মাটি ছোঁবে চন্দ্রযান-৪। চন্দ্রযান-৪ মহাকাশযানের ল্যান্ডার এবং রোভারকে নামিয়ে সেন্ট্রাল মডিউলটি অরবিটিং মডিউলের সঙ্গে জুড়ে যাবে। তার পর পৃথিবীর উপরিভাগে বিচ্ছিন্ন হয়ে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে আবার। সেখানই চাঁদের বুক থেকে সংগ্রহ করে আনা নমুনা পৌঁছে দেবে। 


শুধু তাই নয়, চাঁদের বুকে মানুষ পাঠানোরও পরিকল্পনা রয়েছে ISRO-র। ২০৪০ সাল নাগাদ চন্দ্রপৃষ্ঠে ভারতীয় মহাকাশচারীদের অবতরণ করানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্থার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করেন নীলেশ। তিনি বলেন, "আগামী ১৫ বছরে চন্দ্রপৃষ্ঠে মানুষকে অবতরণ করানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।"