নয়াদিল্লি: সূর্যের আয়ু ফুরোলেই পৃথিবীর মৃত্যু অবধারিত কিনা, এই প্রশ্ন আজকের নয়। মহাশূন্য থেকে এবার সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজে নিয়ে এল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। শুধু পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নয়, সূর্য নিভে গেলে সৌরজগতের কী হবে, তারও সম্ভাবনা তুলে ধরল। (New Exoplanets Discovered)


মহাশূন্যে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে সৌরগজতের বাইরে অবস্থিত দু'টি গ্রহের (এক্সোপ্ল্যানেট) সন্ধান পেয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। দেখা গিয়েছে, মূলত গ্যাস রয়েছে বৃহদাকার ওই গ্রহ দু'টিতে। জ্বালানি নিঃশেষ হয়ে মৃত্যু হয়েছে, এমন দু'টি সাদা রংয়ের বামন নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে তারা। আমেরিকার মেরিল্যান্ডের স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী সুজান মুলেলি এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। (Science News)


সৌরজগরে বাইরে অবস্থিত ওই দুই গ্রহের সঙ্গে সকলের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সুজান। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, 'জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ নয়া যে দু'টি এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করেছে, তাদের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই, WD 1202-232 b এবং WD 2105-82 b. এই গ্রহ দু'টি শীতল, জুপিটারের মতোই, বয়স কোটি কোটি বছর। নক্ষত্রের পরিবেশকে এরাই দূষিত করে তুলেছে'।



আরও পড়ুন: Science News: সৌরজগতের আর কোথাও নয়, নির্দিষ্ট সময়ে ঋতুর পরিবর্তন ঘটে একমাত্র পৃথিবীতেই


সুজান জানিয়েছেন, সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত ওই দু'টি গ্রহের ভর বেশ কয়েকটি বৃহস্পতির সম্মিলিত ভরের সমান। বর্তমানে বৃহস্পতি এবং শনি যেভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে, এই দুই গ্রহও একই ভাবে তাদের নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। তাদের নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটেছে, তাই সাদা রং দেখাচ্ছে। আমাদের সূর্যেরও এমনই পরিণতি হতে পারে। আমাদের সৌরজগতের মতোই, ওই দুই গ্রহ যে জগতের বাসিন্দা, তারও বয়স ১০০ থেকে ৫০০ কোটি বছরের কাছাকাছি।


অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স-এ এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত দু'টি গ্রহের ছবিও তুলে ধরা হয়েছে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের শক্তিশালী লেন্সের দৌলতেই ওই ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে।  সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত দুই গ্রহ এবং তাদের মৃত দুই নক্ষত্রকে দিয়ে আমাদের সৌরজগতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা সম্ভব কি না, এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞান জগতের তরফে তাতে সিলমোহর পড়েনি। তবে এই গবেষণা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, নক্ষত্রের মৃত্যুর পরও যদি ওই দুই গ্রহ তাদের প্রদক্ষিণ করে যেতে পারে, তাহলে আমাদের সৌরজগতের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হতে পারে। বিশেষ করে বৃহস্পতি এবং শনির ক্ষেত্রে। কারণ সূর্য থেকে বৃহস্পতি এবং শনির যত দূরত্ব, সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত ওই দুই নক্ষত্র থেকে তাদের গ্রহের দূরত্বও প্রায় সমান। সেক্ষেত্রে সূর্যের মৃত্যু ঘটলেও বেঁচে থাকতে পারে আমাদের সৌরজগৎ।


এখনও পর্যন্ত, সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত ৫ হাজারের বেশি গ্রহের সন্ধান মিলেছে। তাদের গতিবিধি, প্রভাব পর্যবেক্ষণ করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এই প্রথম সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত গ্রহ এবং নক্ষত্রের ছবি তোলা গেল। সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত মৃত নক্ষত্র দু'টিকে আপাতত WD 1202-232 এবং WD 2105-82 নাম দেওয়া হয়েছে। পৃথিবী থেকে তাদের গ্রহদু'টি যথাক্রমে ৩৪ এবং ৫৩ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তাদের আয়তন বৃহস্পতির আয়তনের চেয়ে ১ থেকে ৭ গুণ বড়।