নয়াদিল্লি: অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দৌলতে মহাকাশ বিজ্ঞানে নিত্যদিন নতুন উচ্চতা ছুঁয়ে চলেছি আমরা। চাঁদের মাটি ঢের আগেই ছোঁয়া হয়ে গিয়েছে। এবার মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর তোড়জোড় চলছে (Space Science)। তাতে মহাকাশযানে চেপে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবেন নভোচরেরা। কিন্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ছাড়িয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি এবং দীর্ঘ সময় মহাশূন্যে ভেসে থাকার এই প্রক্রিয়া শরীরেও প্রভাব ফেলে। একদিকে যেমন হাড়ক্ষয় হয়, তেমনই মস্তিষ্কের কার্যকলাপও প্রভাবিত হয় (Science News)।
মহাকাশযাত্রা মস্তিষ্কে কী প্রভাব ফেলে, সম্প্রতি তার রহস্য ভেদ করতে দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে গবেষণা। সম্প্রতি আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লেরিডার গবেষকরা তা নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। আর তা হল, ব্রেন ক্যাভিটি। ব্রেন অর্থাৎ মস্তিষ্ক এবং ক্যাভিটি অর্থাৎ গহ্বর বা ছিদ্র। দীর্ঘদিন মহাকাশে কাটিয়ে ফেরা বিজ্ঞানীদের মস্তিষ্কের কূপ থেকে তরল বেরিয়ে গিয়ে, সেগুলি আরও প্রসারিত হয় বলে জানা গিয়েছে গবেষণায়। অর্থাৎ ক্ষয় হয় মস্তিষ্কের (Brain Cavities)।
৩০ জন মহাকাশচারী, যাঁরা অভিযানে গিয়ে ফিরে এসেছেন, তাঁদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে এই গবেষণা হয়েছে। এঁদের মধ্যে আটজন দুই সপ্তাহের মহকাশ অভিযানে গিয়েছিলেন, ১৮ জন গিয়েছিলেন ছয় মাসের জন্য এবং চার জন গিয়েছিলেন এক বছরের জন্য। অভিযানে যাওয়ার আগে এবং পরের অবস্থা যাচাই করে দেখা গিয়েছে, মহাকাশচারীদের মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠে কিছু পরিবর্তন ঘটেছে।
মানুষের মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠগুলি পরস্পরের সঙ্গে আন্তঃসংযুক্ত। এগুলি আদতে কূপের মতো ফাঁকা জায়গা, যার মধ্যে সেরিব্রোস্পাইনাল তরল থাকে, যা মস্তিষ্ককে আঘাত থেকে রক্ষা করে এবং প্রতিপালন করে। মস্তিষ্ক থেকে আবর্জনা দূর করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এই তরলের।
কিন্তু মাধ্য়াকর্ষণ শক্তির প্রভাব যেখানে কম, সেখানে বেশিদিন থাকলে সেরিব্রোস্পাইনাল তরল গড়িয়ে উপরের দিয়ে চলে আসে, তাতে কূপগুলি আরও প্রসারিত হয়। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মধ্যে থাকলে যা সম্ভব হয় না। কারণ তার টানেই ওই তরল মস্তিষ্কের সর্বত্র সমান ভাবে ছড়িয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: Fireflies Extinction: আঁধারের বুকে আর ভাসে না আলো, জোনাকিরা এবার নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে
মহাকাশ থেকে ফেরা নভোচারীদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখা গিয়েছে, ছয় মাস বা তাঁর বেশি সময় যাঁরা মহাকাশে কাটিয়েছেন, তাঁদের কূপগুলি আকারে তুলনামূলক বড়। সাত জন নভোচর, যাঁরা মহাকাশে প্রায় তিন বছর কাটিয়েছেন, তাঁদের মস্তিষ্কের কূপগুলি আগের অবস্থায় ফেরেনি। ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডার অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স এবং কাইনেসিওলজির অধ্যাপক রেচেল সিডলার জানিয়েছেন, যত বেশি সময় মহাকাশে কাটিয়েছেন যে নভোচর, তাঁদের কূপগুলি আকারে তত বড়।
সিডলার জানিয়েছেন, অনেক নভোচর রয়েছেন, যাঁরা জীবনে একাধিক বার মহাকাশ অভিযানে যান। তাঁদের মাঝখানে অন্তত তিন বছর বিশ্রাম নেওয়া উচিত, যাতে ফের স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে পারে কূপগুলি। গবেষণায় বলা হয়েছে, ছোটখাটো যাত্রায় তেমন পরিবর্তন ঘটে না। দুই থেকে ছয় মাসের যাত্রা হলে দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। যাঁরা দীর্ঘ দিন মহাকাশে থাকেন, ছয় মাসের পর তাঁদের মস্তিষ্কের কূপগুলি কিছুটা সঙ্কুচিত হতে দেখা গিয়েছে, যা ইতিবাচক ফল। কারণ আগামী দিনে মঙ্গল গ্রহ অভিযানের ক্ষেত্রে, যাতে ৮০০ থেকে ১০০০ দিন সময় লাগতে পারে, তাতে নভোচররা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম হবেন বেল আশাবাদী গবেষকরা।
তবে মস্তিষ্কে কূপগুলির দীর্ঘমেয়াদি প্রসারণের প্রভাব এখও অস্পষ্ট। আগামী দিনে এ নিয়ে আরও তথ্য উঠে আসবে বলে আশাবাদী গবেষকরা। তাতে ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ অভিযানেও সাফল্য মিলবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বইরে মস্তিষ্কের আচরণ কেমন হয়, এই গবেষণা থেকে বোঝা সম্ভব হল। আগামী দিনে কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণযুক্ত মহাকাশযান তৈরির ক্ষেত্রে তা কাজে লাগবে এবং নভোচররা সুস্থ শরীরেই অভিযান সেরে ফিরতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।