কলকাতা: বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্ঘ এভারেস্ট পর্বতের শৃঙ্গ। তার চেয়ে উঁচু কোনও জায়গা নেই পৃথিবীতে। কিন্তু বিশ্বের গভীরতম জায়গা কোনটা? আন্দাজ আছে সেটা কতটা গভীর? প্রথম প্রশ্নের উত্তর-মারিয়ানা ট্রেঞ্চ। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরের আগে একটা কথা বলা যায়- ওই জায়গার গভীরতম এলাকা হিসেবে ধরলেগোটা এভারেস্ট এঁটে যাবে সেখানে।  


পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মারিয়ানা দ্বীপের পূর্বদিকে রয়েছে মারিয়ানা ট্রেঞ্চ। গোটা ট্রেঞ্চটি আড়াই হাজার কিলোমিটার লম্বা। National Oceanic and Atmospheric Administration (NOAA)- জানাচ্ছে ওই গোটা এলাকার সবচেয়ে গভীরতম অংশের নাম চ্যালেঞ্জার ডিপ (Challenger Deep), মারিয়ানা ট্রেঞ্চের দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে সেই এলাকা।


কতটা গভীর চ্যালেঞ্জার ডিপ?
NOAA-এর মতে চ্যালেঞ্জার ডিপ ১০৯৩৫ মিটার গভীর। অর্থাৎ এভারেস্টের দৈর্ঘের থেকে অন্তত ২১০০ মিটার বেশি গভীর। 


২০২১ সালে Deep Sea Research Part 1: Oceanographic Research Papers- এ একটা গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। ২০২০ সালের voyage থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ওই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এর আগেও চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতা নিয়ে একাধিক সমীক্ষা-গবেষণা হয়েছে। তাতে বিভিন্ন তথ্য মিলেছে। প্রথম অভিযান হয়েছে ১৯৬০ সালে, সেই অভিযানের পরে বলা হয়েছিল ওই এলাকার গভীরতা ১০৯১১ মিটার। আরও দুই সমীক্ষার একটিতে ১০৯৯৪ মিটার, অপরটিতে ১০৯৮৪ মিটার বলা হয়েছিল।


গভীরতা মাপা কতটা কঠিন?
মারিয়ানা ট্রেঞ্চের ওই এলাকা এতটাই গভীর যে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়েও সেখানকার গভীরতা মাপা বা অন্য তথ্য সংগ্রহ করা অত্য়ন্ত সমস্যাসঙ্কুল বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। 


একাধিক আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সমুদ্রের গভীরতা মাপা হয়ে থাকে। তার মধ্য়ে ২টো প্রধান। একটি হল সোনার (Sonar) আরেকটি হল প্রেশার সেন্সর (Pressure Sensor)। সমুদ্রতলে (Seabed) ওই যন্ত্র বসিয়ে দেখা হয় তার ুপর কত পরিমাণ জল রয়েছে। মারিয়ানা ট্রেঞ্চের চ্যালেঞ্জার ডিপ মাপার ক্ষেত্রে ওই দুটি পদ্ধতিই যথেষ্ট কঠিন। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সোনার বিমের সাহায্য়ে অর্থাৎ শব্দের সাহায্যে গভীরতা মাপার সময় Accuracy নিয়ে সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে ওই এলাকায় এতটাই গভীর বলে। পাশাপাশি জলের লবণের পরিমাণ, উষ্ণতা এবং চাপের উপর এর মাপের পার্থক্য হতে পারে। সেক্ষেত্রে ঠিক গভীরতা মাপতে গেলে সমস্যা হয়। 


বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রেশার সেন্সর-পদ্ধতির ক্ষেত্রে অত গভীরে বিপুল জলের চাপ সামলাতে পারবে এমন যন্ত্র তৈরি কষ্টকর। Sea Level-এ বায়ুর চাপ যা থাকে, চ্যালেঞ্জার ডিপের (Challenger Deep)-এর Seabed-এ সেই চাপ তার ১০০০ গুণ বেশি হয়। এছাড়া, জলের ঘনত্ব, মাধ্যকর্ষ শক্তি, সমুদ্রস্রোত-এমন নানা বিষয় গভীরতা মাপার কাজে প্রভাব ফেলে।


বিভিন্ন রিপোর্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিজ্ঞানীদের একটি অংশ জানাচ্ছেন, মঙ্গল বা চাঁদের ভূমিরূপ সম্পর্কে এখন যত তথ্য় রয়েছে, পৃথিবীর সমুদ্রতল নিয়েও তত তথ্য নেই। ফলে এত বড় জলভাগের তলায় কী লুকিয়ে রয়েছে, তার অনেকটাই এখনও রহস্য়। এখনও এমন অনেক জলজ প্রাণী বা জলজ উদ্ভিদ রয়েছে যা বিজ্ঞানীদের অগোচরেই রয়ে গিয়েছে।


আরও পড়ুন: দেশের হয়ে এক দশক মহাশূন্যে, এখন ফুরিয়েছে প্রয়োজন, আজই আয়ু শেষ কৃত্রিম উপগ্রহের