বেজিং: একসঙ্গে ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পৃথিবীর আলো দেখে মাত্র একজনই। তাই বলে চিরকালের মতো বিচ্ছেদ হয়নি। বরং মাতৃগর্ভ ছেড়ে শিশুশরীরেই পরজীবী হয়ে আশ্রয় নেয় তারই যমজ ভ্রূণ (Parasitic Twin)। অবাস্তব বলে মনে হলেও, ঠিক এমনই ঘটনা সামনে ঘটেছে চিনে, যা শোরগোল ফেলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে (Viran News)।  


শিশুকন্যার মস্তিষ্কের ভিতরে বাসা পরগাছা হয়ে বাসা বেঁধে ছিল তারই যমজ ভ্রূণ


চিনের শাংহাইয়ের ঘটনা। সেখানে এক বছরের শিশুকন্যার মস্তিষ্কের ভিতরে বাসা পরগাছা হয়ে বাসা বেঁধে ছিল তারই যমজ ভ্রূণ। সব ঠিক থাকলে একসঙ্গে, অথবা কয়েক মূহূর্ত আগে-পিছে ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু একজন পৃথিবীর আলো দেখে, অন্য জন লড়াইয়ে হেরে যায়।


চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এমন ঘটনা বিরল হলেও, নতুন নয়। বরং চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় ‘ফিটাস ইন ফিটু’। এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে মার্তৃগর্ভে দু’টি ভ্রূণ পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে, যমজ সন্তান হিসেবে। কিন্তু দু’টির মধ্যে একটিই পৃথিবীর আলো দেখে।


আরও পড়ুন: Meta Layoffs: ফের কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা মেটা সংস্থার, এবার কোপ নন-ইঞ্জিনিয়ারদের উপর


সম্প্রতি নিউরোলজি জার্নালে এই বিশেষ ঘটনা সামনে এসেছে। এক বছরের ওই শিশুর মোটর ফাংশন সমস্যা ছিল, অর্থাৎ যন্ত্রণার সঙ্গে খিঁচুনি ধরত। নড়াচড়া করতে পারত না। শিশুটির মাথাটিও অস্বাভাবিক রকমের বড় আকার ধারণ করে।


রোগের কারণ জানতে পরীক্ষা করা হয়। তাতেই দেখা যায়, শিশুটির মস্তিষ্কের ভিতরে বর্ধিত একটি ভ্রূণ পরজীবী হিসেবে রয়ে গিয়েছে।  শুধু তাই নয়, নিউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, একটি বিকৃত ভ্রূণ দেখতে পাওয়া যায়। জিনোম সিকোয়েন্স করে দেখা যায়, সেটি ওই শিশুটিরই যমজ ভ্রূণ।


এক বছরের শিশুর মস্তিষ্কে থেকে যাওয়া ওই ভ্রূণকে ‘প্যারাসাইটিক টুইন’ অর্থাৎ পরজীবী যমজও বলা হয়। প্রথম তিন মাসের গর্ভাবস্থায় এই বিপর্যয় ঘটে যায়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু থেকে যখন সমষ্টিগত ভাবে কোষ গঠিত হয়, অনেক সময় সেগুলি পুরোপুরি ভাবে বিকশিত হয় না। তার জেরে নবগঠিত ভ্রূণ আগে গঠিত ভ্রূণর মধ্যে ঢুকে যায়। যমজ ভ্রূণর মধ্যে ঢুকে যাওয়ায়, সেটির বৃদ্ধি ঘটে না যদিও, কিন্তু রক্ত সঞ্চালনের জেরে জীবিত থাকে।


ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে মাত্র ২১ দিন বয়সি শিশুর পেট থেকে  মোট আটটি ভ্রূণ বের করা হয়


এর আগেও, একাধিক বার এমন ঘটনা সামনে এসেছে। ১৯৯৭ সালে মিশরের এক ১৬ বছর বয়সি কিশোরের তলপেট থেকে একটি ভ্রূণ বের কার হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ওই কিশোরের পেটে ছিল ভ্রূণটি। গত বছর নভেম্বর মাসেই ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে মাত্র ২১ দিন বয়সি এক শিশুর পেট থেকে  মোট আটটি ভ্রূণ বের করা হয়।