নয়াদিল্লি: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দৈনন্দিন জীবনেও। সেই নিয়ে লাগাতার সতর্কবার্তা এলেও, বিপদমুক্ত হওয়ার লক্ষণ মেলেনি এখনও পর্যন্ত। সেই আবহেই ভয়ঙ্কর তথ্য সামনে এল গবেষণায়। জানা গেল, গত ২০ বছরে মনুষ্যঘটিত কারণে ৬৭ কোটি টন মিথেন মিশে গিয়েছে বাতাসে, যা শিল্প বিপ্লবের আগের পরিস্থিতির তুলনায় প্রায় ২.৬ গুণ বেশি। (Methane Emissions)


Global Carbon Project-এর গবেষণায় এই নয়া তথ্য সামনে এসেছে। বলা হয়েছে, নজিরবিহীন ভাবে, অত্যধিক গতিতে বাতাসে মিথেনের ঘনত্ব বেড়ে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাস এই মিথেন, কার্বন ডাই অক্সাইডের ঠিক পরই। এই ক্ষতি এড়ানোর হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও, গত ২০ বছরে বাতাসে মিথেনের ঘনত্ব ২০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। (Climate Change)


গবেষকরা জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরেই বাতাসে মিথেনের সবচেয়ে বেশি নির্গমন ঘটেছে। যবে থেকে রেকর্ড রাখা শুরু হয়েছে,  এক দ্রুত গতিতে বাতাসে মিথেনের ঘনত্ব বাড়ার নজির নেই। মূলত কয়লা খনি, তেল এবং গ্যাস উৎপাদন কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে বেশি মিথেনের নির্গমন ঘটছে। সেই সঙ্গে রয়েছে গরু এবং ভেড়ার মতো পশুপালন কেন্দ্র এবং খাদ্য ও জৈব বর্জ্য পচানোর প্রক্রিয়া থেকে। 


২০২০ সালে বাতাসে ৪ কোটি ১৮ লক্ষ টন মিথেন মিশেছিল, যা ২০১০ সালের তুলনায় ছিল প্রায় দ্বিগুণ। তার আগের দশকের তুলনায় আবার ছয় গুণ বেশি।  চিন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি থেকেই মিথেনের সবচেয়ে বেশি নির্গমন ঘটে বলে জানানো হয়েছে গবেষণায়। মিথেন যে দূষণ ঘটাচ্ছে, তার জেরেও জলবায়ু পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে মত গবেষকদের। শুধু তাই নয়, মাত্রাতিরিক্ত মিথেন নির্গমনের জেরে বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনার যে প্রয়াস, তা-ও ব্যর্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। 


ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, গত দুই দশকে মনুষ্যঘটিত কারণে বাতাসে ৬৭ কোটি টন মিথেন মিশে গিয়েছে, যা ২০০০ সালের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি।  আর মনুষ্যগঠিত কারণে নির্গত মিথেনের হার ১৮ শতাংশ বেশি বলে জানানো হয়েছে। সেই নিরিখে স্বাভাবিক কারণে নির্গত মিথেনের হারবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। কার্বন ডাই অক্সাইড যদিও এখনও পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। কয়লা, তেল এবং গ্যাস জ্বালানোর ফলেই মিথেনের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে মিশছে, যা কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত টিকে থাকে বাতাসে। সেই নিরিখে মিথেন কয়েক দশক টিকে থাকে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনে মিথেনের নির্গমন রোখার উপর জোর দিলে, দ্রুত সুফল মিলবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু মিথেন নির্গমনের হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায়, সেই আশা হতাশায় পরিঁণত হচ্ছে।