নয়াদিল্লি: পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৪ লক্ষ কিলোমিটার। তাই বলে সম্পর্কে ছেদ পড়েনি। পরস্পরকে কাছছাড়া করেনি পৃথিবী এবং চাঁদ। সৌরজগতের অন্য গ্রহগুলির কারও ১৫০, কারও ১০০-র কাছাকাছি উপগ্রহ থাকলেও, পৃথিবীর ক্ষেত্রে সবেধন নীলমণি চাঁদই, অন্তত খাতায়কলমে সেই ধারণাই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সদা পরিবর্তনশীল জগতে কিছুই একরকম থাকে না। পৃথিবীর ক্ষেত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তন হতে পারে, যার ইঙ্গিত মিলেছে ইতিমধ্যেই। মাঝে মধ্যেই পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরতে থাকা ছোটখাটো উপগ্রহ-সমান বস্তুর সন্ধান মিলেছে একাধিক বার। (Minimoons of Earth)


২০০৬ সালে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র সাহায্যপ্রাপ্ত সংস্থা, Catalina Sky Survey পৃথিবীকে ঘিরে পাক খাওয়া একটি মহাজাগতিক বস্তুর হদিশ পায়। পৃথিবী থেকে পাঠানো হাজার হাজার কৃত্রিম উপগ্রহের মাঝে ভাসমান অবস্থায় খোঁজ মেলে সেটির। গবেষণা চালাতে গিয়ে দেখা যায়, আর পাঁচটি মহাজাগতি আবর্জনার মতো কোনও কৃত্রিম উপগ্রহের দেহাবশেষ নয় সেটি। বরং সেটি আসলে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি হওয়া একটি মহাজাগতিক বস্তু। জোরে ধাক্কা খেয়ে সাময়িক ভাবে পৃথিবীকে ঘিরে পাক খেতে শুরু করে। (Science News)


ওই মহাজাগতিক বস্তুটিকে ‘Minimoon’ বলে ডাকতে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। নাম রাখা হয় 2006 RH120. মাত্র কয়েক মিটার ব্যাসযুক্ত ওই বস্তুটি চাঁদের মতোই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছিল। তবে চাঁদ যেমন আদি-অনন্তকাল ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে, 2006 RH120 পৃথিবীর সাময়িক সঙ্গী, ক্ষণস্থায়ী। মাত্র একবছর ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেই ছিটকে বেরিয়ে যায় সেটি। 


আরও পড়ুন: Satellite Refueling: মহাশূন্যে এবার জ্বালানির ডিপো? মহার্ঘ হলেও হবে সাশ্রয়, বলছেন বিজ্ঞানীরা


 এক দশকেরও বেশি সময় কেটে যাওয়ার পর আরও একটি 'Minimoon'-এর সন্ধান পান বিজ্ঞানীরা, যার নাম রাখা হয় 2020 CD2. Catalina Sky Survey-ই সেটির হদিশ পায়। 2020 CD2-র আয়তন ছিল একটি গাড়ির মতো। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চ মাসে সেটিও পৃথিবী এবং চাঁদের প্রভাবিত অঞ্চল থেকে ছিটকে বেরিয়ে যায়। 


পৃথিবীর সান্নিধ্যে এসে পড়ার দরুণ ওই 'Minimoon' গুলিকে নিয়ে কৌতূহল জন্মায়। সেই মতো শুরু হয় গবেষণা। শুধু পৃথিবীর চারিদিকে পাক খাওয়া প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি মহাজাগতিক বস্তুসমূহই নই, পৃথিবী সংলগ্ন গ্রহাণুর কাছাকাছি থাকা বস্তুসমূহ নিয়েও শুরু হয় অনুসন্ধান, যা মহাজগত অন্বেষণের সহায়ক হয়ে উঠেছে। আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গ্রহবিজ্ঞানী রিচার্ড বিনজেল জানিয়েছেন, মানুষের আন্তঃগ্রহী প্রজাতি (অন্য গ্রহে বিচরণের যোগ্য) হয়ে ওঠার পথে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে এই 'Minimoon' গুলি। আগামী দিনে মঙ্গলগ্রহে উপনিবেশ গড়ে তোলার কাজে এই গবেষণা সাহায্য় করবে বলে আশাবাদী তিনি।  মহাকাশে এমন একাধিক 'Minimoon' থাকতে পারে, যার খোঁজ এখনও পর্যন্ত মেলেনি বলেও মত বিজ্ঞানীদের একাংশের।


তাই ২০১৬ সালে NASA-র তরফে OSIRIS-REx মহাকাশযান প্রেরণ করা হয় মহাশূন্যে। Bennu নামক গ্রহাণু থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজে পাঠানো হয় সেটিকে। ২১৮২ সাল নাগাদ পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে Bennu-র। ২০২৩ সালে Bennu থেকে ৪৫০ কোটি বছর পুরনো নমুনা সংগ্রহ করে ফিরে আসে OSIRIS REx. আবারও একই ধরনের নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। কারণ বিজ্ঞানীদের মতে, গ্রহাণুর চেয়ে এই 'Minimoon'গুলির পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ তাদের গতিবিধির কোনও ঠিক নেই। তবে 'Minimoon'গুলির উপাদান খতিয়ে দেখতেও আগ্রহী বিজ্ঞানীরা। আগামী দিনে সেগুলিকে মহাশূন্যে জ্বালানি ভরার কাজে ব্যবহার করা যায় কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তা-ও।