নয়াদিল্লি: যুদ্ধের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ড্রোন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ড্রোনের মাধ্যমে ত্রাণ পর্যন্ত চালানো হচ্ছে। সেই ড্রোনের মাধ্যমেই মশা ছাড়া হচ্ছে জঙ্গলে। ১০০০ বা ২০০০ নয়, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের জঙ্গলে লক্ষ লক্ষ মশা ছাড়া হচ্ছে ড্রোনের মাধ্যমে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থেই এমন পদক্ষেপ করা হচ্ছে। (Science News)

আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়। সেখানকার জঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে। সেই জঙ্গলেই ঝাঁক ঝাঁক মশা ছাড়া হচ্ছে ড্রোনের মাধ্যমে। তবে মাথার উপর গুনগুন করা, রক্তচোষা মশা নয়, গবেষণাগারে সৃষ্ট বিশেষ মশা ছাড়া হচ্ছে সেখানে। (Mosquitoes Dropped from Drones)

ড্রোনের মাধ্যমে জঙ্গলে ছাড়া মশাগুলি আসলে গবেষণাগারে সৃষ্ট পুরুষ মশা। পুরুষ মশা গায়ে হুল ফোটায় না, রক্ত চোখে না। পাশাপাশি, তাদের শরীরে একটি বিশেষ ব্যাকটিরিয়া ঢোকানো হয়েছে, যার ফলে স্ত্রী মশার সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হলেও তা থেকে স্ত্রী মশা ডিম পাড়বে না। ফলে বংশবৃদ্ধি ঘটবে না মশার। 

কিন্তু এতকিছু প্রয়োজন পড়ল কেন? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতেই এমন পদক্ষেপ। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে এই মুহূর্তে Honecreeper পাখির অস্তিত্ব সঙ্কটে। একসময় এই পাখির ৫০টিরও বেশি প্রজাতি উড়ে বেড়ালেও, কমতে কমতে তা ১৭-য় এসে ঠেকেছে। এর মধ্যে প্রায় সবক’টি প্রজাতির অস্তিত্বই বিপন্ন। ২০২৩ সালে Akikiki প্রজাতির পাখিটিকে বিলুপ্ত বলে ঘোষণাও করা হয়। 

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হওয়াইয়ের জঙ্গলে পশুপাখির মৃত্যুর প্রধান কারণ হল Avian Malaria. একটি মশাবাহিত রোগ সেটি। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে মশার আনাগোনা ছিল না আগে। ১৮২৬ সাল নাগাদ সেখানে মশার আগমন ঘটে, যার জেরে দ্বীপপুঞ্জের বাস্তুতন্ত্রই ওলটপালট হয়ে যাওয়ার জোগাড়। মাটির পশু থেকে আকাশের পাখি, তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না কেউ। 

জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে তাপমাত্রার বৃদ্ধিও চোখে পড়ছে লাগাতার। ফলে আগে ঠান্ডা-শীতল পাহাড়-পর্বতগুলির দিকে না ঘেঁষলেও, এখন সেখানকার জঙ্গলেও মশার উপদ্রব দেখা যাচ্ছে। ফলে পাখিরা রেহাই পাচ্ছে না। আমেরিকান বার্ড কনজারভেটরির হাওয়াই বিভাগের ডিরেক্টর ক্রিস ফার্মার জানিয়েছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে এখন উঁচুতেও উড়ছে মশার দল। এমন চলতে থাকলে Honeycreeper পাখিকে বাঁচানো যাবে না। তাই মশার দলকে নির্মূল করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আর সেই লক্ষ্য়েই ড্রোনের মাধ্যমে গবেষণাগারে সৃষ্ট পুরুষ মশা ছাড়া হচ্ছে সেখানে।