নয়াদিল্লি: একেবারে রক্ষীর মতো দেশের উত্তরে অবস্থান করছে হিমালয় পর্বতমালা। সেখান থেকে নেমে আসা নদীগুলি সচল রেখেছে গ্রাম থেকে শহরকে। ভারতকে তাই আজও হিমালয়ের দান বলে উল্লেখ করা হয়। সেই হিমালয় পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে এবার অদ্ভুত পরিবর্তন চোখে পড়ল। যত দিন যাচ্ছে, মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই বৃদ্ধি ক্রমশ ত্বরান্বিত হচ্ছে বলে জানা গেল। (Mount Everest)
গত ৩০ সেপ্টেম্বর Nature Geoscience জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বিষয়টি উঠে এসেছে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ভূবিজ্ঞান বিভাগের গবেষক অ্যাডাম স্মিথ, চিনের ইউনিভার্সিটি অফ জিওসায়েন্সের ভূবিজ্ঞানী জিং-জেন দাই এই গবেষণায় যুক্ত। তাঁরা জানিয়েছেন, হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে নদী ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটার জেরেই মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত হয়েছে এত। (Mount Everest Growing Taller)
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮.৮৫ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত মাউন্ট এভারেস্ট, পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ। ইন্ডিয়ান এবং ইউরেশিয়ান টেকটোনিক পাতের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে গত ৫ কোটি বছর ধরেই উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে হিমালয় পর্বতমালার। কিন্তু মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধির গতি তার চেয়ে অনেক বেশি বলে উঠে এসেছে নয়া গবেষণায়।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, আজ থেকে প্রায় ৮৯ হাজার বছর আগে কোশী নদী মিশে যায় অরুণ নদীর সঙ্গে। সেই থেকে এভারেস্টের উচ্চতা ৪৯ থেকে ১৬৪ ফুট বেড়ে গিয়েছে। যে ভূতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে এই উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাকে আইসোস্ট্যাটিক রিবাউন্ড (Isostatic Rebound) বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। বাংলায় তর্জমা করলে অর্থ হয় ভারসাম্যজনিত প্রতিক্ষেপণ।
গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর ০.০৮ ইঞ্চি করে উচ্চতা বাড়ছে এভারেস্টের, যা প্রত্যাশার চেয়ে অনেকটাই বেশি। এর জন্য অরুণ নদীকে দায়ী করা হচ্ছে। অরুণ নদীর গতিপথও অদ্ভুত বলে মত গবেষকদের। তাঁদের মতে, সাধারণত গাছের মতো শাখাপ্রশাখা থাকে নদীর। অরুণ নদীটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে এসে হঠাৎই ইংরেজি হরফ L-এর মতো আকার নিয়েছে। একেবারে ৯০ ডিগ্রি কোণে হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য একটি নদী এসে মেশাতেই এমনটা ঘটেছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
কোশী নদী এবং অরুণ নদী পরস্পরের সঙ্গে মিশে যাওয়ার পর ওই অঞ্চলে ব্যাপক ভূমিক্ষয় হয়। প্রচুর পরিমাণ পাথর, মাটি সরে দিয়ে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। ওজন কমে যায় ভূত্বকের। ওই শূন্যস্থান পূরণে নীচের অংশের মাটি উপরের দিকে উঠে আসে, ঠিক মালপত্র তুলে নিলে নৌকা যেমন জলের উপরে উঠে আসে।
গবেষকদের দাবি, প্রতি বছর মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা যত বৃদ্ধি পায়, তার ১০ শতাংশই ঘটে এই আইসোস্ট্যাটিক রিবাউন্ডের জেরে। প্রতি বছর ০.০১-০.০২ ইঞ্চি করে উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে মাউন্ট এভারেস্টের। বর্তমান দিনে ঝোড়ো হাওয়া, ভারী বৃষ্টিপাত এবং নদীর জলস্রোতের ধাক্কায় ভূমিক্ষয় ঘটছে এবং সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে উঠে আসছে ভূগর্ভের মাটি, যা মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধি করছে।
শুধুমাত্র মাউন্ট এভারেস্ট নয়, লোৎসে, মাকালু পর্বতশৃঙ্গেরও উচ্চতা লাগাতার বেড়ে চলেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। মাকালু অরুণ নদীর কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। মাউন্ট এভারেস্টের তুলনায় উচ্চতা সামান্য বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। GPS Measurement-এ এই উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টি প্রমাণিত বলে জানাানো হয়েছে।।মাউন্ট এভারেস্ট-সহ আশেপাশের সব পর্বতশৃঙ্গেরই উচ্চতা বৃদ্ধি হয়েছে। অ্যাডামের মতে, পৃথিবী কতটা পরিবর্তনশীল, তা এই ঘটনাই প্রমাণ করছে। রোজকার ব্যস্ত জীবনে আমরা টের না পেলেও, অনেক কিছু ঘটে চলেছে।