নয়াদিল্লি: এখানেও 'বৃষ্টি' পড়ে, তবে বালি-বৃষ্টি। গাঁজাখুরি নয়, এমনই এক গ্রহের হদিশ পেয়েছে নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ যেখানে একেবারে ছোট বালির কণা বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে। গ্রহটির নাম  Wasp-107b। তবে এর একটি আদুরে ডাকনামও রয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাকে 'candy floss' গ্রহ বলেও সম্বোধন করেন। সেই গ্রহতেই 'বালি-বৃষ্টির' হদিশ পেয়েছে নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। গবেষণাপত্রটি 'নেচার' জার্নালে প্রকাশিতও হয়েছে।


বালি-বৃষ্টি নিয়ে...
'Virgo constellation'-র সদস্য ওই গ্রহ। দূরত্ব প্রায় ২০০ আলোকবর্ষ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অবশ্য এর আগেই গ্রহটির কথা জেনেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, বিশাল বড় অথচ তুলনায় অত্যন্ত হালকা'candy floss'  নিয়ে আগে থেকেই উৎসাহ রয়েছে। তবে সেখানে বালি-বৃষ্টির বিষয়টি একেবারে হালে ধরা পড়েছে নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের 'চোখে'। Catholic Institute (KU) Leuven-র অধ্যাপক তথা সাম্প্রতিক এই গবেষণার প্রধান গবেষক লিফ ডেসিনের কথায়, 'পৃথিবী থেকে আমরা যতটুকু জানতে পারছি, অন্য গ্রহ সম্পর্কে সেটুকুই আমাদের জানা। কিন্তু বাস্তবে এই ধরনের জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত।' ২০১৭ সালে গ্রহটির প্রথম খোঁজ মেলে। যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে এটি ঘুরছে, সেটির আলোর নির্দিষ্ট সময়ে ঝিকমিক করে উঠত, নজরে পড়েছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের। ডেসিন বললেন, 'ল্যাম্পপোস্টের সামনে কোনও মাছি ভনভন করলে ল্যাম্পপোস্টের আলো যে ভাবে ঝিকমিক করে ওঠে, সে রকম ঘটেছিল।' সেই পর্যবেক্ষণই অন্য মাত্রায় নিয়ে গেল নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ।


টেলিস্কোপের চোখে...
গ্রহটির আবহমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে তার নক্ষত্র থেকে আসা আলো 'ফিল্টার' হয়ে কতটা পৌঁছচ্ছে, সেটি মেপেছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আবহমণ্ডলে থাকা একাধিক উপাদান আলোর একাধিক ওয়েভলেংথ শুষে নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে, ওই নক্ষত্রের কতটা আলো গ্রহের মধ্যে এসে পৌঁছচ্ছে, তা মেপে দেখলে বোঝা সম্ভব আবহমণ্ডলের মধ্যে কী কী গ্যাস রয়েছে। সেই পর্যবেক্ষণই ধরা পড়ে, গ্রহের আবহমণ্ডলে জলীয় বাষ্প, সালফার ডাই-অক্সাইড রয়েছে। পাশাপাশি, গ্রহটির মেঘের রাসায়নিক গঠনও বিশ্লেষণ করতে পারা গিয়েছে, দাবি গবেষকদের। সেখানেই 'সিলিকেট স্যান্ড'-র অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীতে যেমন জল, ওই গ্রহে ঠিক তেমনই ওই গ্রহে কঠিন ও বায়বীয় অবস্থায় পাওয়া যায় 'সিলিকেট স্যান্ড'-কে। নিয়মটি মোটামুটি একই। গরম হতে হতে এই বালির কণা আবহমণ্ডলের উপরের স্তরে উঠতে থাকে, তার পর শীতল হয়, ধীরে ধীরে মাইস্ক্রোপিক কণার আকার ধারণ  করে। ধীরে ধীরে এগুলিই ঘন হয়ে মেঘে পরিণত হয়, তার পর ঝরে পড়ে। 


আরও পড়ুন:ধূমকেতু থেকেই প্রাণের সৃষ্টি ব্রহ্মাণ্ডে, গবেষণায় উঠে এল নয়া তথ্য