নয়াদিল্লি: পৃথিবীতে প্রাণসৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে জল। সেই জল এসেছিল গ্রহাণুর দৌলতে। প্রাণধারণের উপযুক্ত বিকল্প পরিবেশ খুঁজতে গিয়ে এবার মহাশূন্যে জলের হদিশ পেলেন বিজ্ঞানীরা। দূরের একটি গ্রহমণ্ডলকে ঘিরে থাকা গ্যাসের বলয়ে পাওয়া গেল জলীয় বাষ্প (Science News)। ওই গ্রহমণ্ডলে মূলত পাথুরে গ্রহ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেখানে জলীয় বাষ্পের খোঁজ পাওয়ায় মহাশূন্যে প্রাণ বা প্রাণধারমের উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া নিয়েও আত্মবিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা (NASA)। 


পৃথিবী থেকে ৩৭০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত PDS 70 নক্ষত্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা গ্রহমণ্ডল। সেখানে দুই বা ততোধিক প্রোটোপ্ল্যানেট রয়েছে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। প্রোটোপ্ল্যানেট অর্থাৎ বৃহদাকার মহাজাগতিক বস্তু, যা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করলেও, এখনও পর্যন্ত পুরোদস্তুর গ্রহ হয়ে ওঠেনি। ওই PDS 70 গ্রহমণ্ডলকে ঘিরে দু'টি গ্যাসীয় বলয় রয়েছে। 


আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ, PDS 70 গ্রহমণ্ডলের ভিতরের দিকে থাকা বলয়ে জলীয়বাষ্পের খোঁজ পেয়েছে, মূল নক্ষত্র থেকে যার দূরত্ব প্রায় ১৬ কোটি কিলোমিটার।  ওই এলাকায় মূলত পাথুরে গ্রহ গড়ে উঠছে। মহাশূন্যে কোনও বলয়ে  এমন জায়গায় জলের খোঁজ মিলল এই প্রথম বার। 




ছবি: নাসা


আরও পড়ুন: Penguins Death: অনাহারে মৃত্যু, নাকি নেপথ্যে অন্য রহস্য, আটলান্টিক থেকে ভেসে এল ২০০০ শিশু পেঙ্গুইনের দেহ


জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউ ফর অ্যাস্ট্রনমির বিজ্ঞানী জুলিয়া পেরোত্তির বক্তব্য, "এর আগেও জলের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে মহাশূন্য়ে। কিন্তু যেখানে গ্রহ এখনও গড়েই ওঠেনি, তেমন কোনও বলয়ে জলের সন্ধান মিলল এই প্রথম। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের আগে যত পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে, কোথাও এমন বিষয় ধর পড়েনি।"


জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের MIRI সরঞ্জামের দায়িত্বে থাকা টমাস হেনিং বলেন, "অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। ওই এলাকায় পৃথিবীর মতো পাথুরে গ্রহ তৈরি হতে দেখা গিয়েছে। সেখানে জলের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি উৎসাহ জোগাাচ্ছে সকলকে।" সূচনাপর্বে গ্রহরা গ্রহাণু থেকেই জল পায় বলে মত বিজ্ঞানীদের। গ্রহের জন্মলগ্নেই তার আশেপাশে জলের সন্ধান পাওয়া গেল এবার। 


যে PDS 70 গ্রহমণ্ডলকে ঘিরে জলীয়বাষ্পের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, সেটি একটি K-টাইপ নক্ষত্র, সূর্যের থেকে ঠান্ডা বয়স ৫০৪ কোটি বছর। মহাশূন্যে অন্যত্র যে যে জায়গায় এমন গ্রহমণ্ডল রয়েছে, তার নিরিখে বয়স একটু বেশি। তাই সেখানে জলীয়বাষ্পের সন্ধান পাওয়ায় একটু হতবাকও বিজ্ঞানীরা। 


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বলয় থেকে গ্যাস এবং ধুলো ধীরে ধীরে সরতে থাকে। নক্ষত্রের বিকিরণ এবং হাওয়ার দাপটেও সেগুলি সরে যায়। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে ধুলো জমে গিয়ে বিশেষ আকার ধারণ করে, যা থেকে নতুন গ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু গ্রহ গড়ে ওঠার সময় বলয়ের মধ্যে জলের সন্ধান মিলল এই প্রথম। তাই এর আয়ুকাল নিয়ে সন্দিহান বিজ্ঞানীর। তাঁদের মতে নক্ষত্রের বিকিরণ সহ্য করতে পারবে না জলীয়বাষ্প। উবে যাবে একটা সময়, তাতে ওই পাথুরে গ্রহগুলি আরও শুষ্ক হয়ে উঠবে।


কিন্তু এই জলীয়বাষ্প এল কোথা থেকে, তা নিয়েও মিলেছে ব্যাখ্যা। বিজ্ঞানীরা দু'টি সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন, ১) হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন পরস্পরের সংস্পর্শে এসে জলের আকার ধারণ করছে, ২) ঠান্ডা জায়গা থেকে বরফে মোড়া ধুলোর কণা এসে পড়ছে বলয়ের উপর।  সেখানে তাপমাত্রা বেশি হওয়ায়, তা জলীয়বাষ্পে পরিণত হচ্ছে।