নয়াদিল্লি: পৃথিবীর আকাশে থেকে হঠাৎই গায়েব মঙ্গলগ্রহ। চারিদিক খুঁজেও দেখা মিলছে না লালগ্রহের। সেই নিয়ে সাধারণ মানুষ উৎকণ্ঠা বোধ করলেও, এর নেপথ্যে বিজ্ঞানসম্মত কারণ রয়েছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। তাঁরা জানিয়েছেন, সূর্যের যে দিক পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান, তার উল্টো পিঠ দিয়ে এই মুহূর্তে এগিয়ে চলেছে মঙ্গল। সেই কারণেই পৃথিবীর আকাশে এই মুহূর্তে দৃশ্যমান নয়। তাতে মঙ্গলাভিযানেও একরকমের ছেদ পড়ল। (Mars Mission Paused)


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সূর্যের কাছাকাছি অবস্থান করছে মঙ্গল। সূর্য থেকে তার কৌণিক দূরত্ব ১ ডিগ্রিরও কম। সূর্য এবং মঙ্গল, দুই মহাজাগতিক বস্তুই এখন তুলামণ্ডলে অবস্থান করছে।  সেই কারণেই আগামী কয়েক দিন মঙ্গলগ্রহের দেখা মিলবে না। কারণ সূর্যের আলোয় সেটি ঢাকা পড়ে গিয়েছে। এতে চিন্তার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। (NASA)


প্রতি দু'বছর অন্তর এই পরিস্থিতি তৈরি হয়, যখন পৃথিবী এবং মঙ্গলের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। এই পরিস্থিতিকে সৌর সংযোগও বলা হয় বিজ্ঞানের ভাষায়।  এমনিতে পৃথিবী এবং মঙ্গলের মধ্যেকার দূরত্ব ২২ কোটি ৫০ লক্ষ মাইল। সৌর সংযোগের সময় এই দূরত্ব বেড়ে ২৩ কোটি ৫০ মাইল হয়, যা স্বাভাবিক গড় দূরত্বের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি হয়। 


আরও পড়ুন: Samples from Moon: শিবশক্তি পয়েন্ট থেকে তুলে আনা হবে মাটি ও পাথর, পরবর্তী চন্দ্রাভিযানে প্রস্তুত ISRO


এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র পৃথিবীবাসীই মঙ্গলের দর্শন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র কাজকর্মেও এর প্রভাব পড়ছে, প্রতি দু'বছর অন্তরই তা ঘটে। পৃথিবীর বিকল্প বাসস্থান গড়ে তোলা থেকে প্রাণের সন্ধান পেতে মঙ্গলে NASA-র কিউরিওসিটি এবং পার্সিভ্যারেন্স রোভার কাজ করছে। মঙ্গলের শুষ্ক এবং অনুর্বর মাটির উপর উডডে বেড়ায় ইনজেনুইটি হেলিকপ্টারও। এর পাশাপাশি কক্ষপথে একাধিক কৃত্রিম উপগ্রহও রয়েছে।


কিন্তু সৌর সংযোগের সময় সেগুলির কোনওটির সঙ্গেই যোগাযোগ বজায় রাখা সম্ভব হয় না। ওই সমস্ত মহাকাশযান থেকে তথ্য এসে পৌঁছয় না পৃথিবীতে। সেই কারণে আগে থাকতেই এই সময় মঙ্গলের বুকে গবেষণার কাজ স্থগিত রাখা হয়। এবারও তার অন্যথা হয়নি। NASA-র তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, '১১ থেকে ২৫ নভেম্বর, দুই সপ্তাহ মঙ্গলে নির্দেশ পাঠানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  প্রতি দু'বছর অন্তরই এমন ঘটে।"


NASA জানিয়েছে, এই সময় সূর্যের আলোকমণ্ডল থেকে নির্গত উষ্ণ, আয়নিত গ্যাসের সংস্পর্শে এসে পৃথিবী থেকে পাঠানো রেডিও সিগনাল বাধাপ্রাপ্ত হয়। আংশিক ভাবে তা পৌঁছলেও, ফল হয় বিপরীত। অদ্ভূত আচরণ করতে শুরু করে মহাকাশযান। তাই এমন সিদ্ধান্ত। গত ১১ নভেম্বর, শনিবার মঙ্গলে সিগনাল পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২৫ নভেম্বর থেকে আবার শুরু হবে। তাই বলে মঙ্গলাভিযানের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা ছুটি পাচ্ছেন না। মঙ্গলের আবহাওয়া, গতি-প্রকৃতির দিকে নজর রাখবেন তাঁরা। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ফের পৃথিবীর আকাশে প্রত্যাবর্তন ঘটবে মঙ্গলের।