কলকাতা: লালগ্রহের মাটিতে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযান চলছে কিউরিওসিটি রোভারের (NASA Curiosity Mars Rover)। বহু তথ্য ইতিমধ্যেই জেনেছেন বিজ্ঞানীরা। এবার সামনে এল সাড়াজাগানো আরও একটি তথ্য। মঙ্গলের মাটিতে অভিযান চালানোর সময় কিউরিওসিটির ক্যামেরায় ধরা পড়েছে পাথরের গায়ে ছোট ছোট ঢেউ খেলানো দাগ। যেন জলের উপর ঢেউ খেলে গিয়েছে। বিস্তৃত জায়গা জুড়ে এমন পাথর ছড়িয়ে, সেটাই ক্যামেরাবন্দি করেছে রোভারের ক্যামেরা। তাতেই সাড়া পড়ে গিয়েছে পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের মধ্যে। কারণ তাঁদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, এই ঢেউ খেলানো দাগ আসলে বহুযুগ আগে মঙ্গলের মাটিতে জল থাকার বড়সড় প্রমাণ।
ঢেউ খেলানো রহস্য:
NASA সূত্রে খবর, এই ঢেউ খেলানো দাগ (Ripple) মঙ্গল গ্রহে Mount Sharp-এর পাথুরে মাটিতে পাওয়া গিয়েছে। Curiosity বহু পাথুরে জমির (Rock Deposit) উপর দিয়ে গিয়েছে, পরীক্ষা করেছে, ছবি তুলেছে। কিন্তু এর আগে এত স্পষ্ট দাগ দেখতে পাওয়া যায়নি বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
আগে মিলেছে এমন ছবি?
ক্যালিফোর্নিয়ায় নাসার জেট প্রপালশান গবেষণাগারে (NASA's Jet Propulsion Laboratory) কর্মরত Curiosity-এর প্রজেক্ট সায়েন্টিস্ট Ashwin Vasavada জানাচ্ছেন, এতদিন পর্যন্ত হওয়া ওই রোভারের অভিযানে এটাই জল থাকার সবথেকে বড় প্রমাণ। তিনি জানাচ্ছেন, এতদিন একাধিক Lake Deposit-এলাকায় চষে বেরিয়েছে Curiosity, কিন্তু এমন প্রমাণ মেলেনি। এমন জায়গা থেকে এই ছবি এসেছে যেই এলাকা শুষ্ক বলে মনে করছিলেন বিজ্ঞানীরা।
কোথায় মিলল খোঁজ:
গত বেশ কিছুদিন ধরে Curiosity Rover-মঙ্গলের এমন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে, যে এলাকার পাথর 'Sulfate-bearing' বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নুন-সমৃদ্ধ এই এলাকা সেই সময় তৈরি হয়েছিল যখন প্রাচীন কোনও হ্রদ ক্রমাগত শুকিয়ে যাচ্ছিল। ঢেউ খেলানো দাগ কীভাবে তৈরি হল? বিজ্ঞানীরা মনে করছেন কোনও অগভীর হ্রদ ছিল। হাওয়ার ধাক্কায় যখন জলের উপর ছোট ঢেউ তৈরি হয়েছে, তারই প্রভাবে হ্রদের নীচে পলিস্তরে (Sediment) ঢেউ খেলানো ভাঁজ তৈরি হয়েছে। Mount Sharp-এর একটি অংশে এই এলাকা দেখা গিয়েছে। বিভিন্ন সময়ের পাথরের স্তরে গঠিত এই Mount Sharp- মঙ্গলগ্রহের ইতিহাসের খনি বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। এই এলাকায় একসময় হ্রদ ছিল, বয়ে গিয়েছিল জলের ধারা। ফলে মঙ্গলগ্রহে আদৌও প্রাণ ছিল না তা জানার জন্য এই এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে, এমনটাই জানানো হয়েছে NASA-র তরফে।
২০২২ সালে 'Marker Band'-এর ৩৬০ ডিগ্রি ছবি তুলেছে Curiosity. এই পাথুরে এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করার জন্য ড্রিল করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু পাথর অত্যন্ত শক্ত ছিল। ফলে নরম কোনও পাথরের স্তরের খোঁজে রয়েছে বিজ্ঞানীরা। মঙ্গলের মাটিতে পাথরের স্তরের আকার, অবস্থান এমন রয়েছে তা থেকে বিজ্ঞানীদের মনে হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে ক্রমাগত বদলের কারণে এখন শুষ্ক গ্রহে পরিণত হয়েছে মঙ্গল। এমন পাথরের স্তরের অবস্থান পৃথিবীতেও দেখা যায় যা 'periodic change'-এর প্রমাণ।
এবার আরও কিছু খোঁজের- জন্য এগোচ্ছে Curiosity. Markar Band-এ নজর রাখা হচ্ছে। Mount Sharp-এর একটি বিশেষ এলাকায় নজর রাখা হবে, যেখানে কোনও একসময় নদীর চিহ্ন ছিল বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন: পাসপোর্ট নিয়ে বড় ঘোষণা, এখন যাচাই পদ্ধতিতে লাগবে এই সময়