নয়াদিল্লি: ভবিষ্যতে পৃথিবীর বাইরে, মহাশূন্যের বুকে বসতি গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েইছে। সেই লক্ষ্যপূরণের আগে চাঁদের বুকে ট্রেন ছোটানোর সিদ্ধান্ত আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র। সেই মতো চাঁদের বুকে রেল যোগাযোগ গড়ে তোলার প্রস্তাব দিল তারা। নমুনা সংগ্রহ থেকে চাঁদের মাটিকে ভাল করে চেনা, রেল যোগাযোগ গড়ে উঠলে তা দুইয়েরই সহায়ক হবে বলে মত বিজ্ঞানীদের। (Lunar Railway System)
বলা বাহুল্য, চন্দ্রপৃষ্ঠের রেল পরিবহণ ব্যবস্থা পৃথিবীর মতো হবে না। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে চাঁদের মাটিতে রোবট-চালিত পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যা রোজকার গবেষণার কাজেও বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে, পাশাপাশি, ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদের মাটিতে স্থায়ী গবেষণাগার তৈরিতে সাহায্য করবে। তবে ওই রেল যোগাযোগের উপর নির্ভর করে চাঁদের বুকে ঘুরে বেড়াতে পারবেন না বিজ্ঞানীরা। শুধুমাত্র রোবট বিচরণেরই উপযুক্ত। (Rail Transport on Moon)
প্যাসাডিনায় NASA-র জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরির রোবট বিশেষজ্ঞ ইথান স্কেলার বলেন, “চন্দ্রপৃষ্ঠে প্রথম রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই আমরা, যা পেলোড পরিবহণের টেকসই, স্বতন্ত্র এবং কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠবে। ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদের বুকে দীর্ঘমেয়াদি ঘাঁটি গড়ে তুলতে এবং রোজকার অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য এই পরিবহণ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।”
আরও পড়ুন: Chandrayaan 4 Mission: এবার চন্দ্রযান-৪ অভিযানের পালা, চাঁদের বুকে কোথায় অবতরণ? বড় ঘোষণা ISRO-র
চাঁদের বুকে যে রেল যোগাযোগ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে NASA-র, তার পোশাকি নাম Flexible Levitation on a Track (FLOAT). এর আওতায় ত্রিস্তরীয় ফিল্ম ট্র্যাক বসানো হবে চন্দ্রপৃষ্ঠে, যা তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তি উৎপন্ন করবে। ওই ফিল্ম ট্র্যাকের উপরে থাকবে গ্রাফাইটের আস্তরণ, যা চৌম্বকীয় ক্ষেত্র দ্বারা বিকর্ষিত হয় এমন উপাদান দিয়ে তৈরি রোবটকে ভেসে থাকতে সাহায্য করবে। অর্থাৎ ফিল্ম ট্র্যাকের উপর কার্যত ভেসে বেড়াবে ওই রোবট।
NASA জানিয়েছে, একটি সূক্ষ্ম সৌর প্যানেলও বসানো হবে, যা থেক শক্তির জোগান মিলবে। ফিল্ম ট্র্যাকের উপর যে রোবট নামানো হবে, তাতে কোনও চাকা থাকবে না। এই রেল যোগাযোগ গড়ে তুলতে চাঁদের বুকে কোনও খোঁড়াখুঁড়ি বা নির্মাণকার্যে হাত দিতে হবে না NASA-কে। বরং চাটাই পাতার মতো করে FLOAT ফিল্ম ট্র্যাক বিছিয়ে দিতে হবে।
NASA জানিয়েছে, প্রথন পর্যায়ে এই রেল যোগাযোগের মাধ্যমে রোবটের উপর জিনিসপত্র চাপিয়ে এক জায়গা থেকে অন্যন্ত্র নিয়ে পাঠানো যাবে। ৩০ কেজি ওজনের রোবট সেকেন্ডে ০.৫ মিটার গতিবেগে ১ লক্ষ কেজি পর্যন্ত শিলা, পেলোড বয়ে নিয়ে যেতে পারবে। রোজ কয়েক কিলোমিটার যাত্রা করতে পারবে ওই রোবট। দ্বিতীয় পর্যায়ে মানুষ পরিবহণের উপযুক্ত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যা আরও দ্রুত গতিসম্পন্ন হবে।
চন্দ্রপৃষ্ঠে কোথায় এই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়, প্রথমে তা ঠিক করা হবে। এর পর রোবট এবং ফিল্ম ট্র্যাক বিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাবেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে চাঁদের পরিবেশের কোনও ক্ষতি হবে কি না, তা-ও দেখা হবে। এর পর প্রযুক্তিগত বাধা-বিপত্তির দিকগুলিও খতিয়ে দেখবেন বিজ্ঞানীরা। সব ক্ষেত্রে উতরে গেলে তবেই কাজে হাত দেওয়া হবে।
২০২১ সালেই চাঁদের বুকে এই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব জমা পড়ে। NASA-র Innovative Advanced Concepts (NIAC) প্রকল্পের আওতায় এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। চাঁদের পর এই প্রকল্পের রূপায়ণ করা হতে পারে মঙ্গলগ্রহের বুকেও।