নয়া দিল্লি: গত কয়েক দিন ধরেই সূর্যের (Sun) করোনা (Corona) অংশে যেন উথালপাথাল পরিস্থিতি। মহাকাশে বারবার ধেয়ে আসছে সৌরঝড় (Sun Storm)। যা নিয়ে আগেও সতর্ক করেছে নাসা (NASA)। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সেই সতর্কবার্তা সত্যি করে পৃথিবীর (Earth) গায়ে এসে লাগল সৌরঝড়ের ধাক্কা। এই ঝড়ের ফলে পৃথিবীর বুকে একাধিক দেশের আকাশে দেখা গেছে অভিনব মেরুজ্যোতি (Aurora)। 


তীব্র সৌরঝড়ের কারণে উত্তরের মেরুজ্যোতি (অরোরা) স্বাভাবিকের চেয়ে আরও দক্ষিণে সরে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আমেরিকার উইসকনসিন, ওয়াশিংটন, কলোরাডো, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ মেক্সিকো, অ্যারিজোনার বাসিন্দাদের পাশাপাশি লাদাখের আকাশে দেখা গেল বিরল দৃশ্য। মেরুপ্রভা ফুটে উঠল পাহাড় ঘেরা এই অঞ্চলে। বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এর তরফে জানান হয়েছে, লাদাখের যে অংশে এই অরোরা তা দেখতে পাওয়া সত্যিই বিরল। অক্ষাংশের নিরিখে লাদাখে এই দৃশ্য দেখা যাওয়ার কথা নয়। 


রবিবার রাত থেকে এই ভূ-চৌম্বকীয় তুফান শুরু হয়েছিল। যা সোমবার সারাদিন চলে। এই ঝড়ের ফলে পৃথিবীর বুকে একাধিক দেশের আকাশে দেখা গেছে অভিনব মেরুজ্যোতি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রোববার রাতে আকাশে মেরুজ্যোতির ছটা লক্ষ্য করা গেছে। মহাজাগতিক আলোয় ছেয়ে গিয়েছিল আকাশের একাংশ। দক্ষিণ ইউরোপ, এমনকি ফ্রান্স পর্যন্ত এই মেরুজ্যোতির ঝলক দেখা গিয়েছে। চিনের আকাশে উজ্জ্বল লাল রঙের মেরুপ্রভা দেখতে পেয়েছেন অনেকে। বার্লিনে রাতের আকাশে দেখা গিয়েছে গাঢ় সবুজ রঙের আলো। এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখা যায়নি বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। একই দৃশ্যের সাক্ষী থেকেছে পোল্যান্ডও।


সৌরঝড়ের ফলে সূর্যের মধ্যেকার আগুনে পদার্থ ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় চারদিকে। মহাকাশে সৌরজগতের অন্যত্রও সেই পদার্থের বিচ্ছুরণ ঘটে। প্রভাব পড়ে সূর্যের বিভিন্ন গ্রহ ও উপগ্রহের পারিপার্শ্বিকে। এনওএএ অনুযায়ী, রবিবারের সৌরঝড় ছিল সূর্যের বুকে ওঠা তৃতীয় বড় ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর দিকে একের পর এক সৌরঝড় ধেয়ে আসতে পারে।


আরও পড়ুন, বিছানায় ফোন রেখে ঘুম মৃত্যু ডেকে আনার সমান! আশঙ্কা প্রকাশ গবেষকদের


সৌরঝড়ের ধাক্কায় পৃথিবীতে ঠিক কী কী ক্ষতি হতে পারে? বিজ্ঞানী এবং গবেষকেরা জানিয়েছেন, এর ফলে পৃথিবীতে বৈদ্যুতিন এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে নানা ধরনের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। নাসার বিজ্ঞানীদের মতে, সৌরঝড়ের ফলে পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে ফাটল ধরতে পারে। যার প্রভাবে জিপিএস, বেতার যোগাযোগ সাময়িক ভাবে বিচ্ছিন্ন হতে পারে। ঝড়ের মাত্রা অনুযায়ী এই প্রভাব দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে পৃথিবীর ইন্টারনেট সংযোগের উপরেও। মোবাইল নেটওয়ার্কও এর ফলে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কোথাও কোথাও সাময়িক ভাবে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হওয়াও অসম্ভব নয়।