কলকাতা: মনে রাখা বা স্মরণের প্রক্রিয়া (New Memory And Brain Cell Damage) এমনিতেই সহজ নয়। তার উপর ধরুন, নতুন কিছু মনে রাখতে গিয়ে যদি মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি হয়ে যায়, তা হলে? কল্পবিজ্ঞান নয়, আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল ইঁদুরদের উপর গবেষণা চালিয়ে সম্প্রতি এমনই তথ্য জানতে পেরেছেন। তাঁদের গবেষণায় উঠে আসা ফলাফল বিশিষ্ট 'নেচার' জার্নালে প্রকাশিতও হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, নতুন কোনও স্মৃতি তৈরির সময় মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সোজা কথায়, মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি না করে স্মৃতি তৈরির জো নেই। অন্তত তাঁদের দাবি এমনই।
এ কী রহস্য?
সাধারণ ভাবে, নতুন কোনও তথ্য বা পর্ব স্মৃতির ভাঁড়ারে ভরে রাখার সময় মানবদেহে যে প্রক্রিয়াটি চলে তার নাম 'মেমরি কনসলিডেশন।' এক্ষেত্রে বহু বছর ধরে মানব মস্তিষ্কের ভূমিকা নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন গবেষকরা। তাতে দেখা গিয়েছে, কোনও কিছু স্মরণ করার সময় শারীরবৃত্তীয় স্তরে একটি নির্দিষ্ট ধরনের গতিবিধি দেখা যায়। কী সেই গতিবিধি? একেবারে সোজা করে বললে, প্রথমে কিছু নিউরোনের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি এবং তার পর সেই যোগাযোগ শক্তিশালী করে তোলা, এর মাধ্যমেই স্মৃতির দীর্ঘমেয়াদি ছাপ তৈরি হয় মস্তিষ্কে। হালের গবেষণা জানাচ্ছে, এই প্রক্রিয়ারও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। ইঁদুরদের উপর গবেষণা চালিয়ে অন্তত সেরকমই দেখেছেন আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল।
যা দেখা গেল...
ইঁদুরদের মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে 'হিপোক্যাম্পাস' নামে একটি জায়গাকে চিহ্নিত করে তার গতিবিধি দেখেন এই গবেষকরা। দলটির অন্যতম গবেষক ছিলেন নিউ ইয়র্কের আলবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অফ মেডিসিনের নিউরোসায়েন্টিস্ট জেলেনা রাডুলোভিক। সংবাদমাধ্যমকে পরে তিনি জানান, দীর্ঘমেয়াদে কিছু মনে রাখতে গেলে দেখা গিয়েছে মস্তিষ্কের কোষগুলির মধ্যে প্রদাহ হচ্ছে। তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ডিএনএ-ও। তাঁর কথায়, 'মস্তিষ্কের কোষে প্রদাহ সাধারণ ভাবে ক্ষতিকর বলেই মনে করা হয়। কারণ এই ধরনের সমস্যা থেকে অ্যালঝাইমার্স ও পার্কিনসন্সের মতো রোগের সম্পর্ক থাকে। কিন্তু আমাদের গবেষণা বলছে, দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি তৈরির ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাল চত্বরের কিছু নিউরোনে প্রদাহ আবশ্যক।' অর্থাৎ প্রদাহ, যা কিনা সাধারণ ভাবে মস্তিষ্কের কোষের জন্য ক্ষতিকারক, স্মৃতি তৈরির ক্ষেত্রে হিপোক্যাম্পাসের কিছু নিউরোনে সেটি আবশ্যক, এমনই দেখেছেন গবেষকদলটি। এই ফলাফল প্রকাশ্যে আসতে আলোচনা শুরু হয়েছে বিশেষজ্ঞমহলে। যদিও বেশিরভাগেরই মত, গবেষণাটি ইঁদুরদের উপর করা হয়েছে। ফলে এই ফলাফল থেকে স্মরণে মানব মস্তিষ্কের গতিবিধি বোঝা কঠিন। দ্বিতীয়ত, এই ধরনের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে নিশ্চিত হতে গেলে আরও একাধিক পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ জরুরি। তবে প্রাথমিক গবেষণা হিসেবে বিষয়টি যথেষ্টই আলোড়ন ফেলেছে।
আরও পড়ুন:ইতিমধ্যেই বসে গিয়েছে ৩ মিটার, ক্রমশ অবনমন ঘটছে চিনের, জানা গেল গবেষণায়