কলকাতা: জগদীশ চন্দ্র বসু অনেক আগেই বলে গিয়েছিলেন গাছেরও প্রাণ আছে। কিন্তু তাই বলে গাছও কাঁদে? সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, একথা সত্যিই। খুব যন্ত্রণা পেলে, ব্যথা লাগলে, অবহেলায় হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে তারাও। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন 'বলাই' গল্পে লিখেছিলেন, 'বিশ্বপ্রাণের মূক ধাত্রী এই গাছ নিরবচ্ছিন্ন কাল ধরে দ্যুলোককে দোহন করে বলে চলে আমি থাকব। তবে তারা বাগানের শৌখিন গাছ নয় বলে, তাদের নালিশ শোনবার কেউ নেই'। ঠিক যেমন করে বলাই শুনতে পেয়েছিল গাছেদের সঙ্গীত, তেমন বিজ্ঞানীরাও শুনেছেন গাছেদের কান্না।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানুষ যেমন ব্যথা পেলে কঁকিয়ে ওঠে, গাছও ঠিক এমনভাবেই কেঁদে ওঠে। ইজরায়েলের তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্রথমবার এই শব্দ রেকর্ড করেছেন। তিনি বলেছেন, পপকর্ন যেভাবে পপিং আওয়াজ করে, তেমনই আওয়াজ করে কাঁদে। যদিও মনুষ্যকানে ধরা পড়ে না এই আওয়াজ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স) ব্যবহার করে গাছের কান্না শুনেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ প্ল্যান্ট সায়েন্স অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটির বিজ্ঞানী লিলাচ হাদানি ও তাঁর সহ-গবেষকরা। টানা ১০ থেকে ১২ বারও আর্তনাদ করে। জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা দুটি গ্রন্থে ‘গাছের কথা’ ও ‘উদ্ভিদের জন্ম মৃত্যু’ নির্বাক জীবন সম্পর্কে বলা হয়েছিল। ভয়-ব্যথা-আনন্দ অনুভবের ক্ষমতা আছে, সেই প্রাণের লক্ষণের কথা তিনি জানিয়েছিলেন।
টম্যাটো, তামাক, ভুট্টা, ক্যাকটাস ইত্যাদি গাছ নিয়ে পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দেখেছেন, যেসব গাছ অবহেলায় ছিল তাঁর সাহায্যের জন্য চিৎকার করেছে। একটানা আর্তনাদ করেছে। পুরো পরীক্ষাটাই চলে সাউন্ডপ্রুফ অ্যাকুস্টিক চেম্বারে। শক্তিশালী মাইক্রোফোনে রেকর্ড করা হয় বিভিন্ন গাছেদের আওয়াজ। তাতে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যে সব গাছ অবহেলায় ছিল, তারা সাহায্যের জন্য একটানা আর্তনাদ করেছে।
আরও পড়ুন, পৃথিবীর দিকে দ্রুত ছুটে আসছে বিশালাকার গ্রহাণু, সতর্কতা জারি NASA-র
যন্ত্রের সাহায্যে সেই শব্দ ও তার তীব্রতা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, গাছেদের আঘাত পাওয়ার আর্তনাদ একরকম, অবহেলায় থাকার কান্না আর একরকম। তবে প্রাণ যে আছে, দুঃখ যে তাঁদেরও হয়, নিঃসন্দেহে এই গবেষণা এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে বিজ্ঞানের।