কলকাতা: ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে সমুদ্রের রং। তার জন্য আসলে দায়ী মানুষই। অবাক লাগলেও এমনই ঘটনা ঘটছে। একটি সমীক্ষা বলছে গত দুই দশকে মানুষের কাজকর্মের ফলে হওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি Nature- জার্নালে এই বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। 


প্রবন্ধটিতে বলা হয়েছে, নিরক্ষরেখার কাছাকাছি থাকা ট্রপিক্যাল রিজিয়ন বা ক্রান্তীয় এলাকার সমুদ্রের রং ক্রমশ সবুজ হয়ে উঠছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, সমুদ্রের এমন রংবদলের অর্থ সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রেও বদল ঘটছে। কারণ সমুদ্রের জলের রং সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের উপর অনেকটাই নির্ভর করে। 


যৌথভাবে ২টি প্রতিষ্ঠান এই গবেষণা চালিয়েছে। আমেরিকার Massachusetts Institute of Technology (MIT) এবং ইংল্যান্ডের National Oceanography Center এই গবেষণা করেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, এই রংবদলের জন্য শুধুমাত্র প্রতিবছর আলাদা আলাদা প্রাকৃতিক কারণ দায়ী নয়।


যদিও এই রংবদল খালি চোখে অতটা স্পষ্ট নয়। সাধারণ মানুষের পক্ষে এই বদলে যাওয়া রং চট করে ধরা পড়বে না। কিন্তু তথ্যে যা ধরা পড়েছে তা ভয়ানক। কারণ এখনও পর্য্ত সমুদ্রের ৫৬ শতাংশ এলাকায় এই রংবদল হচ্ছে। MIT-এর Department of Earth, Atmospheric and Planetary Sciences and the Center for Global Change Science- এর গবেষক এবং এই প্রবন্ধের সহ-লেখক Stephanie Dutkiewicz জানিয়েছেন, সমুদ্রের এই বদলে যাওয়া রংয়ের গতিপ্রকৃতি বুঝতে একটি Simulation চালানো হয়েছিল। যা দেখা গিয়েছে, তা ভয়ের বলেই তাঁর মত। এই বদলে যাওয়ার পিছনে মানুষের কাজের ফলে হওয়া জলবায়ু বদল দায়ী বলেও জানানো হয়েছে। 


IANS-সূত্রের খবর, ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল ওশনোগ্রাফিক সেন্টার এর গবেষক এবং এই প্রবন্ধের মূল লেখক BB Cael বলেছেন, 'পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের উপর মানুষের কাজের প্রভাব কতটা হতে পারে, এই গবেষণা তা আরও একবার স্পষ্ট প্রমাণ দিল।'


সমুদ্রের উপর জলবায়ু বদলের প্রভাব বুঝতে বিজ্ঞানীরা প্রাথমিকভাবে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের (phytoplankton) উপর নজর রেখেছিল। উদ্ভিদ-স্বরূপ এই মাইক্রোঅর্গানিসমজ সমুদ্রের উপরিভাগে থাকে। এতে ক্লোরোফিল থাকে। এই ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যশৃঙ্খলের অন্যতম ভিত্তি। কার্বন ডাই অক্সাইড- সঞ্চয় নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 


Moderate Resolution Imaging Spectroradiometer (MODIS) উপগ্রহ গত ২১ বছর ধরে সামুদ্রিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। এর থেকে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে গবেষণা হয়েছে। সাতটি দৃশ্যমান তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মাপে ছবি তোলে MODIS. যদিও উপগ্রহের মাধ্যমে রং বদলের যে ছবি ধরা পড়েছে তা খালি চোখে বোঝার উপায় নেই।


২০০২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তার পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ (statistical analysis) করেছে গবেষকরা। এই বিশ্লেষণ থেকেই একটি ট্রেন্ড পাওয়া গিয়েছে। 


আরও পড়ুন: বাড়িতে বসেই ঝরঝরে ইংরেজি-শিক্ষা! সাহায্য করবে AI